Hot!

অর্থহীন



দীর্ঘপ্রায় ১ যুগ পরে আজ এক লৌহ-মানবীর সাথে দেখা। তার জীর্ণ-শীর্ণ মূখবয় দেখে সবকিছু যেন “অর্থহীন” মনে হলো। অধিকায় সেই মূখখানা এমন প্রকৃতির হয়েছে-চেনা বড় দায়। চোখ দুটো জীবিত, আমার দিকে ফ্যালফ্যল করে তাকিয়ে আছে বিরামহীন-প্রশ্নজর্জরিত।



খানিক পরে জীর্ণ মূখেই অষ্পষ্ট স্বরে বলল; “কে-ম-ন.....আছ?”
উত্তর দিলাম: “সাধরণ”।



পাশেই লুবনা আপা। জীর্ণ তার মূখখানাও, যেন ভাবনার অন্ত নেই। দুটো বাচ্চা আইপ্যাড নিয়ে ব্যস্ত।
কত পরিবর্তন??????????
লুবনা আপা????? এখন দু’বাচ্চার গর্বিত মা!!!!!!!!!!!


বাবু ভাইয়া স্পেনে আজ ১১ বছর হলো। আমার সাথে যোগাযোগ আছে। নানান প্রয়োজনে আমি এখনো তার সঙ্গী। সকালে ফেইসবুকে ম্যাসেজ দিল ল্যাব এইডে যাবি.....দেখে আসবি।



কি মহানুভবতা বাবু ভাইয়ার!!!!! অবাক হইনা। কারণ তিনি সর্বদা যেমন ছিলেন এখনো তেমনি আছেন, বদলাননি। শুধু বদলেছে, লুবনা আপা আর তার লৌহ-মানবী “মা” যিনি ল্যাব এইডের বিছানায় শুয়ে পরপারের কথা হয়তো ভাবছেন..........হয়তো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন.....।


একদা আমি বাবু ভাইয়ার আর লুবনা আপার পিয়ন ছিলাম। পত্র-উপহার প্রায় সবকিছুরই পিয়ন। লুবনার আপার মা’কে আমি চাচী ডাকতাম। এক পর্যায়ে লুবনা আপাদের বাসায় আমার আসা-যা্ওয়ার উপর ১৪৪ ধারা জারি করেন চাচী। চাচী বলতেন, সব নষ্টের মূল নাকি আমি। একটা বেকার (বাবু) ছেলের সাথে তার মেয়ের সকল অঘটনের দায় নাকি আমারই নিতে হবে!!!!!! সর্বশেষ দু’চার জন আত্মীয় স্বজনের সামনে আমাকে ১০ বার কানে ধরিয়ে ঐ বাসা থেকে চির বিদায় দিলেন সেই সময়কার লৌ-মানবী যিনি আজকে ফ্যালফ্যাল করে আমার পাণে চেয়ে আছেন... কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না।


বাবু ভাইয়ার অপরাধ....."তিনি বেকার...মাস্টার্স করেছে তো কি হয়েছে? চাকরী নেই...গাড়ী নেই...বাড়ী নেই.......আর অপবাদ ছিল....."লুবনা আপাকে বাবু ভাইয়া ব্ল্যাকমেইল করছে শুধুমাত্র তাদের অগাত সম্পত্তির লোভে"।.....কিন্তু আমি জানি, কতটা ভালবাসতেন বাবু ভাইয়া লুবনা আপকে...আর কতটা ভালবাসতেন লুবনা আপা বাবু ভাইয়াকে.....এমন গল্প কোন দিন নাট্যরূপে হবেনা......কোনদিন দ্বিতীয় উদাহরণ সৃষ্টি হবেনা।


আমার কান ধরার দিনই ছিল তাদের ভালবাসার শেষ দিন। সেদিন বাবু ভাইয়া তার প্রাণের প্রিয়তমাকে তুলে দিলেন আজকের বিছানায় শয্যাশায়ী লৌহ-মানবীর হাতে। সেটাই শেষ বিদায়......সেটাই শেষ।


ঐদিন, ২/৪ লোকজন ছিল...এরমধ্যে বাবু ভাইয়ার বড় ভাই রাজা ভাই, আমি, লুবনা আপার এক মেজর মামা এবং একজন ইমাম। লুবনা আপার মা দরবারে একহস্তে পবিত্র কোরআন শরিফ অন্যহস্তে বিষের কৌটা নিয়ে হাজির হলেন। শর্ত একটাই, বাবু ভাইয়ার সাথে লুবনা আপার এখনি বিয়ে হবে, তবে লুবনা আপাকে যেতে হবে তার লাশের উপর দিয়ে।







বাবু ভাইয়া আর সহ্য করতে পারেননি। পানি শূন্য রক্তচোখে নিজেকে সামলে নিলেন....আপাকে বললেন... “যে মা তোমাকে গর্ভে ধারন করেছে তাকে তুমি অপমান-অবিশ্বাস করতে পারোনা, তুমি তার.....”


কিশোর বয়সে গোল্লাছুট মাঝে যার সাথে পথচলা-হাত ধরা, স্বপ্ন দেখা...সেই স্বপ্নের শেষ বিদায়, চলে আসা। তারপর বাবু ভাইয়া স্পেন চলে গেলেন। শুনেছি, লুবনা আপার মা’ নাকি এক বিরাট-আচ্ছা সম্পদশালীর নিকট লুবনা আপাকে পাত্রস্থ করেছেন। আর শুনেছি, লুবনা আপার একমাত্র ছোট ভাই রাজিব নাকি অষ্ট্রেলিয়া আছেন, এক বিদেশিনীকে বিয়ে করে ওখানেই মগ্ন।



এখন, বিছানার পাশে লুবনা আপা এবং তার দু’বাচ্চা।

খানিক পরেই এক বৃদ্ধের আগমন ঘটল। বাচ্চা দুটো উঠে গিয়ে “আব্বু আব্বু” বলে কিসের যেন একটা বায়না ধরল।



এতক্ষণে বুঝলাম, সেই লুবনা আপা কেন এতো বুড়িয়ে গেলেন????? বয়সে প্রায় ২০ বছরের বড় এই লোকটির চেহারায় রক্তশূন্যতা প্রকট। যেকোন মহূর্তে তাকেও শয্যাশায়ী করতে হতে পারে।

আমার কাছে সবকিছু “অর্থহীন” মনে হলো..........................

মানুষ নিজের সুখের-সন্তানের সুখের জন্য কত কিছুই না করে??? লুবনা আপার লৌ-মানবী “মা” তার প্রকৃষ্ট উদাহরন। নিজ মেয়ের সুখের জন্য তিনি যা করেছেন তা সমাজে বিরল নয়।


উঠে দাঁড়ালাম প্রস্থানের আশায়।
দরজা পর্যন্ত এলেন লুবনা আপা.....নিচু গলায়..লুকানো চোখে....বললেন....“কেমন আছে সে.....??”


উত্তর দিলাম, “অতি সাধারণ”।

(বাবু ভাইয়া আজ অবদি বিয়ে করেননি, নিজের কামানে টাকা বৃদ্ধাশ্রম আর এতিম খানায় পাঠিয়ে দেন, স্পেনে তার বিশাল অবস্থা, দুটো রেষ্টুরেন্টসহ নানান ব্যবসা....কিন্তু অতি সাধারণ.............এবং অর্থহীন নন।)

0 comments:

Post a Comment