Hot!

Other News

More news for your entertainment

৫৪ ধারায় নিঃশেষ এক জীবন



১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই। এই দিনটি অভিশাপ হয়ে এসেছিল যুবক ফজলু মিয়ার জীবনে। পুলিশের সন্দেহের কারণে তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেল ২২টি বছর। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর মুক্তি মিলছে বটে, কিন্তু আর কি ফিরে পাবেন তিনি স্বপ্নময় সেই জীবন?http://adexcelbd.com/www/delivery/lg.php?bannerid=0&campaignid=0&zoneid=47&loc=http%3A%2F%2Fwww.kalerkantho.com%2Fprint-edition%2Ffirst-page%2F2015%2F10%2F15%2F279307&referer=https%3A%2F%2Fwww.google.com%2F&cb=9911204d5b

২২ বছর আগে সিলেটের আদালতপাড়ায় ঘোরাঘুরি করার সময় পুলিশের একজন ট্রাফিক সার্জেন্টের সন্দেহের শিকার হন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলি ইউনিয়নের ধরাধরপুর গ্রামের ফজলু মিয়া। এরপর তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ফজলুর বিরুদ্ধে পাগল আইনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।

গতকাল বুধবার ফজলু মিয়াকে ভুক্তভোগী হিসেবে আদালতে উপস্থাপনের পর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ফজলুকে আইনি সহায়তা দেওয়া বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্টের আইনজীবী জ্যোৎস্না ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'আদালতে ফজলু মিয়াকে আসামি নয় বরং একজন ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করেছি। আদালত বিষয়টি অনুধাবন করে জামিন মঞ্জুর করেছেন।'

ফজলু মিয়াকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর একসময়ের সহপাঠী দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য কামাল উদ্দিন রাসেল। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তাঁকে (ফজলু) অনেক বছর খুঁজে ফিরেছি। কিন্তু পাইনি। তিন বছর আগে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। এরপর খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে দেই। কিন্তু কয়েক দিন আগে জানতে পারি, তিনি কারাবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এরপর খোঁজখবর নিয়ে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করি।'

জানা গেছে, ফজলু মিয়া যখন গ্রেপ্তার হন তখন তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ২৭-২৮ বছর। এখন তাঁর বয়স ৫০ পেরিয়েছে। শরীর ভেঙে গেছে। ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না। কথাও জড়িয়ে যায় মুখে। অতীতের কিছুই যেন তাঁর মনে নেই। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন দেখাচ্ছিল তাঁকে।

ধরাধরপুর গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফজলু ওই গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলার ছেলে। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর মা-বাবা দুজনই মারা যান। পরিবারের আর কেউ নেই। তিনি বিয়ে করেননি, সংসার হয়নি তাঁর। এই ২২ বছর তাঁকে কেউ কারাগারে দেখতে আসেনি। কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন গুনে গুনে ১৯৭ দিন। সেই আদালতপাড়ায়ও দেখা হয়নি তাঁর কোনো স্বজনের সঙ্গে।



আদালতে নথিপত্র ঘেঁটে যতটুকু জানা গেছে তা হলো ১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সিলেটের আদালতপাড়া থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে ফজলু মিয়াকে আটক করেন তৎকালীন ট্রাফিক সার্জেন্ট জাকির হোসেন। সন্দেহের বশে ৫৪ ধারায় ফজলুকে ধরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তারপর ফজলুর বিরুদ্ধে পাগল আইনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।


পরে ২০০২ সালে ফজলুকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। আদালত থেকে আদেশ পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দেন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন এই ব্যক্তিকে নিতে কেউ আসেননি। ফলে তাঁকে আবারও নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। এরপর কেটে গেছে আরো ১৩ বছর।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া বলেন, 'আদালতের নির্দেশ যাই থাক না কেন, আমরা তো গেটের বাইরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারি না। সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ তাদের সেই দায়িত্বটা পালন করতে পারেনি।'

একসময় ফজলুর এই বিভীষিকাময় জীবনের কথা গণমাধ্যমে উঠে আসে। ফলাও করে প্রচার হয় ফজলু মিয়ার করুণ কাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। কিন্তু তার পরও আইনের মারপ্যাঁচে কেটে যায় আরো ১০ বছর।

অবশেষে গতকাল আদালতে হাজির হন ফজলু মিয়া। এটি ছিল তাঁর ১৯৮তম হাজিরা। সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম জহুরুল হক চৌধুরী তাঁর জামিন আবেদন শোনেন। ফজলু মিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জ্যোৎস্না ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সৈয়দ শামিম আহমদ। পরে আদালত কামাল উদ্দিন রাসেলের জিম্মায় ফজলুকে জামিন দেন।

কামাল উদ্দিন রাসেল বলেন, ফজলুকে চিকিৎসা করানো দরকার। আজ মুক্তি পেলে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর অন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা ঠিক করা হবে।

কামাল আরো জানান, এর মধ্যে ঢাকার দুটি প্রবীণ নিবাস ফজলুর দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাঁরা ভেবে দেখছেন কী করা যায়।


- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2015/10/15/279307#sthash.qMUu4vV8.dpuf

যাঁরা দল করেন না, তাঁদের চাকরি কে দেবে?

যাঁরা দল করেন না, তাঁদের চাকরি কে দেবে?

আলী ইমাম মজুমদার | আপডেট:  | 
কার্টুন: তুলিবিষয়টি এখন বাংলাদেশের প্রশাসনে একটি মৌলিক প্রশ্ন হিসেবে আসছে। এ সংস্কৃতির সূচনা প্রায় দেড় দশক আগে থেকে। এর আগে কমবেশি কিছু থাকলেও এখন অনেকটা ব্যাপক ও খোলামেলা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। দেশে রাজনৈতিক দল আছে, থাকবেও। এগুলোর নেতা, কর্মী, সমর্থকও আছেন অনেকে। তবে সব নাগরিকই কিন্তু সরাসরি দলগুলোর কর্মী বা সমর্থক নন। হওয়ার বাধ্যবাধকতা কিংবা প্রয়োজনীয়তাও নেই। তাঁরা দলনিরপেক্ষ। নির্বাচন এলে দলগুলোর পূর্বাপর ভূমিকা, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে প্রার্থীর গুণাগুণ বিবেচনায় ভোট দেন। প্রভাব থাকে আঞ্চলিকতা, সম্প্রদায় ও গোত্রের। বলা অসংগত নয় যে কোনো কোনো স্থানের নির্বাচনে ফলাফলে দলের ভূমিকা গৌণই হয়ে যায়। এভাবে প্রকৃতপক্ষে বেশ কিছু স্থানে দল বা ব্যক্তির নির্বাচনের ফলাফলে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিরাই।
তবে তাঁরা কোনো দলের সদস্য বা স্থায়ীভাবে সমর্থকও নন। তাঁরা কিন্তু এখন মহা মসিবতে আছেন। সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধায় তাঁরা পেছনের কাতারে। চাকরির বাজারে তাঁদের প্রবেশাধিকার সীমিত। বেসামরিক চাকরিতে পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষায় মেধার কিছুটা ভূমিকা থাকে। তবে তা–ও সময়ান্তরে প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আর অন্যান্য চাকরিতে দলের নাম করে নেতা-কর্মীদের সনদ ছাড়া প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। সেই সনদ অবশ্য ভিন্ন দলের লোকেরাও ক্ষেত্রবিশেষে জোগাড় করেন নানা কৌশলে। কোথাও কোথাও টাকাপয়সার লেনদেন বড় রকম ভূমিকা রাখে বলে পত্রপত্রিকায় অভিযোগ আসে। আর এর সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাও আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিরা হয়ে পড়ছেন অচ্ছুত। তাঁদেরও আজ দুঃসময় চলছে।
সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিকে খবর এসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ প্রসঙ্গে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করেছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি আওয়ামী লীগ করেন বলেই এ পদ লাভ করেছেন। তাঁর এ বক্তব্য যথার্থ বলেই ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়। শুধু রাজশাহীতে নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়েছে এবং হচ্ছে। আর এ নিয়মটাই এখন অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দফাতেই ৫৪৪ জন দলীয় সদস্যকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর এ বক্তব্যও তথ্যভিত্তিক। পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেছেন, বর্তমানে পাঁচ শতাধিক শূন্য পদের মধ্যে ‘স্বাধীনতার পক্ষের দেড়-দুই-আড়াই শ ছেলেকে কি চাকরি দেওয়া যায় না?’
এখন যাঁরা বিরোধী দলে আছেন, তাঁরাও হয়তো রাজনৈতিক পালাবদলের আশায় অপেক্ষা করছেন। ‘সুদিন’ এলে সুদাসলে পুষিয়ে দেবেন!
যিনি এ বক্তব্যটি দিয়েছেন, তিনি শুধু ক্ষমতাসীন দলের মহানগর কমিটির সভাপতি নন, পাঁচ বছর এ মহানগরীর নির্বাচিত মেয়রও ছিলেন। তিনি জেলহত্যার শিকার স্বাধীনতাসংগ্রামের অগ্রনায়ক চার নেতার একজনের সন্তান। এসব বিবেচনায় অতি সম্মানিত ও দায়িত্বশীল নাগরিক তিনি। সুতরাং তাঁর বক্তব্যও গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
প্রথমেই দেখা দরকার, তিনি স্বাধীনতার পক্ষের লোক বলতে কাদের বোঝাতে চাইছেন। এ বিষয়ে খুব গভীরে না গেলেও বলা চলে, সম্ভবত তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের কথাই বলতে চেয়েছেন। অনস্বীকার্য, তাঁর দল স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে রাখতেও তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এর বাইরে যেসব দলীয় বা নির্দলীয় লোক আছেন, তাঁদের পাইকারিভাবে নিশ্চয়ই স্বাধীনতাবিরোধী বলা যাবে না। দেশপ্রেমিক যে-কেউ হতে পারেন। এমনকি নেতারা যাঁদের চেনেন না বা জানেন না, তাঁরাও। দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের বিপরীতে কারও অবস্থান থাকলে তাঁর স্থান তো আইনানুগভাবে প্রমাণ সাপেক্ষে হওয়ার কথা কারাগার। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ এ ধরনের বিভাজনের কর্তৃত্ব নিতে পারেন না। আজ স্বাধীনতার পক্ষের নাম দিয়ে যাঁদের চাকরি দেওয়ার কথা উঠেছে, তাঁরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতাসীন দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী বা তাঁদের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তি। অবশ্য তিনি পুরো শূন্য পদের বিপরীতে তাঁর তালিকা দেননি। তবে নিয়োগপর্ব শুরু হলে তাঁর দলের এমনকি অঙ্গসংগঠনের অন্য নেতারাও বসে থাকবেন না। সক্রিয় হবেন জোটের অন্য দলের কোনো কোনো নেতাও।
এমনটাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা শূন্য পদকেও ছাড়িয়ে যায় প্রায় কিছু ক্ষেত্রে। তখন কর্তৃপক্ষ কী করবে? আর এভাবে শুধু তালিকা ধরেই যদি চাকরি দিয়ে দিতে হয়, তাহলে নিয়োগের এত ধরনের বিধিবিধান কেন? হতে পারে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দলীয় বিবেচনায় এ ধরনের নিয়োগ দিয়েছে। আর এরই কারণে তো তারা ২০০৮–এর নির্বাচনে চরম খেসারতও দিয়েছে। এখনো দিয়ে চলছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত। নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে এ ধরনের নিয়োগ দেওয়া সমীচীন মনে করবে না দেশের সচেতন মহল। আর আগের সরকারের সময়েও তা করেনি। এ ধরনের নিয়োগ গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে বারংবার। সেই ধারাবাহিকতা ভাঙা আর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারই ২০০৮ সালে মহাজোটের মহাবিজয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল।
অবশ্য দুর্ভাগ্য, অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষেত্রেই। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হলে রাজনৈতিক নেতারা তালিকা ধরিয়ে দেন। এর বিপরীতে অবস্থান নিলে পরীক্ষাকেন্দ্র ভাঙচুর, দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নাজেহাল আর জেলা প্রশাসককে হয়রানিমূলক বদলির শিকার হতে হয়। ঠিক তেমনই অবস্থা পুলিশ কনস্টেবল ও এসআই নিয়োগের ক্ষেত্রে। নিয়োগের পর্ব শুরু হলে কোনো কোনো এসপি ছুটি নিয়ে রেহাই পেতে চান বিড়ম্বনা থেকে। একই ‘তালিকা আখ্যান’। আর এ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য বড় অঙ্কের লেনদেনের কাহিনিও গণমাধ্যমে বারংবার আসে। এই ধারাবাহিকতা চলছে বেসামরিক প্রশাসনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রসারের উদ্দেশ্যে বিধি সংশোধন করে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তো বটেই, বেসরকারি স্কুল-কলেজেও নিয়োগের ক্ষেত্রে চলছে একই সংস্কৃতি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করে নিবন্ধের সূচনা। তবে অন্য বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েও এমনটা ঘটে চলেছে। এ ধরনের চাপ দিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় শাসক দলের ছাত্রসংগঠন।
তাহলে যাঁরা এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট হতে পারছেন না, তাঁরা যাবেন কোথায়? এর জবাব অন্য কেউ দেবে না। খুঁজতে হবে আমাদের নিজেদেরই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে। মনে হয়, তারা সবাই ধরে নিচ্ছে ক্ষমতায় গেলে শুধু তাদের কর্মী-সমর্থকদের চাকরি হবে। এখন যাঁরা বিরোধী দলে আছেন, তাঁরাও হয়তো রাজনৈতিক পালাবদলের আশায় অপেক্ষা করছেন। ‘সুদিন’ এলে সুদাসলে পুষিয়ে দেবেন! আর আরও বুদ্ধিমানেরা এর জন্য অপেক্ষা করেন না। তাঁরা রং বদলান দ্রুত। এমনকি দীর্ঘদিনের ত্যাগী কর্মী-সমর্থকদেরও পেছনে ফেলে বা বাদ দিয়ে তাঁদের স্থান হয় নেতাদের তালিকায়। এমন অভিযোগ কিন্তু একেবারে কম নয়।
স্বাধীনতার চেতনা ধারণের কথা বলা হয় অনেক ক্ষেত্রে। এমন বলাটা অসংগত নয়। সেই চেতনারই তো ফল আমাদের সংবিধান। সংবিধানের প্রস্তাবনাতেই এর প্রণেতারা ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য সামাজিক সাম্য ও সুবিচার নিশ্চিত করার। প্রস্তাবনার ধারাবাহিকতায় এর মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত অধ্যায়ে প্রজাতন্ত্রের পদে নিয়োগলাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের প্রণেতারা দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এ প্রজাতন্ত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় থেকেই এসব বিধান সংযোজন করেছেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটে চলেছে এর বিপরীত চিত্র। আর যাঁরা এমনটা করছেন, তাঁরা আঘাত করছেন সংবিধানের প্রত্যয়ে। বস্তুতপক্ষে, এ ধরনের আঘাত স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিকও বটে। আর যে দল ক্ষমতায় আসে, তারা সবাই এরূপ করলেই এটা গ্রহণযোগ্য হয়ে যায় না। ভবিষ্যতেও হবে না। চাকরির অধিকার তো থাকা উচিত দল–মতনির্বিশেষে সব যোগ্য ব্যক্তির।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
majumder234@yahoo.com

শিক্ষক পরিমলের ধর্ষণ মামলার রায় ২৫ নভেম্বর

ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ

শিক্ষক পরিমলের ধর্ষণ মামলার রায় ২৫ নভেম্বর

আদালত প্রতিবেদক | আপডেট:  | 

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের দিন ২৫ নভেম্বর ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক সালাউদ্দিন আহম্মেদ এই তারিখ ধার্য করেন।
গতকাল এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত এই তারিখ ধার্য করেন।
এই মামলার একমাত্র আসামি পরিমল জয়ধর। শুনানির আগে তাঁকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২০১১ সালের ২৮ মে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার পাশে একতলা ভবনের একটি কক্ষে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির একজন ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় ৫ জুলাই ওই ছাত্রীর বাবা বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় পরিমল জয়ধর, অধ্যক্ষ হোসনে আরা ও বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুৎফুর রহমানকে আসামি করা হয়। ৭ জুলাই পুলিশ পরিমলকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর পরিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। আর প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হোসেনে আরা ও লুৎফুর রহমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডের নথি হাইকোর্টে

সিলেট ও খুলনার দুই শিশু হত্যা মামলা

মৃত্যুদণ্ডের নথি হাইকোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট:  | 


রাজন হত্যা ও রাকিব হত্যাসিলেটের সবজিবিক্রেতা শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন (১৪) ও খুলনার গ্যারেজ-কর্মী শিশু রাকিব (১২) হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথি (ডেথ রেফারেন্স) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পৌঁছেছে।
গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলা দুটির নথি পৌঁছায়। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের বলেন, সংশ্লিষ্ট শাখা এখন পেপারবুক তৈরি করবে। এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতে উঠবে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে, যখন দায়রা আদালত মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন, তখন মামলার নথি হাইকোর্ট বিভাগে জমা দিতে হয় এবং হাইকোর্ট নিশ্চিত না করা পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না। এ জন্য যেসব ফৌজদারি মামলায় আসামি মৃত্যুদণ্ডাদেশ পান, ওই মামলাগুলোকে ‘ডেথ রেফারেন্স’ বলা হয়।
অবশ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুসারে দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল করার সুযোগ আসামিপক্ষের থাকে।
সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অপবাদে ১৪ বছরের রাজনকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ১৩ আসামির মধ্যে চারজনকে গত রোববার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালত। এ ছাড়া একজন আসামির যাবজ্জীবন, তিনজনের সাত বছর করে এবং দুজনের এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন আসামিকে খালাস দেন আদালত।
ওই একই দিনে খুলনার মহানগর দায়রা জজ আদালত ১২ বছরের রাকিবকে হত্যার দায়ে তিন আসামির মধ্যে দুজনের ফাঁসির আদেশ দেন। বাকি একজনকে খালাস দেওয়া হয়।
দুটি মামলার রায়কেই বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে রায় ঘোষণার নজির হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। রাজন হত্যা মামলার কার্যক্রম শেষ হয় ১৭ কার্যদিবসে, আর ১০ কার্যদিবসে রাকিব হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

দুদকের জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই!

দুদকের জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই!

মোর্শেদ নোমান | আপডেট:  | 

বেসিক ব্যাংকে কেলেঙ্কারিবেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডাকা নিয়ে পুরোনো বিতর্ক নতুনভাবে শুরু হয়েছে। সংসদীয় কমিটি দুদককে ডাকতে পারে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছে দুদক। আর সংসদীয় কমিটি বলছে, সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী দুদককে ডাকা যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি যেসব নথি পেয়েছে তাতে স্পষ্ট যে বেসিক ব্যাংকের টাকা লুটের সঙ্গে জড়িত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এর পরিচালনা পর্ষদ বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত দুদকের কর্মকর্তা অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধিকে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হবে। এ বিষয়ে স্পিকারের সঙ্গে পরামর্শ করে শিগগিরই চিঠি পাঠানো হবে।
দুদক যদি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হাজির না হয় তাহলে কমিটি কী করবে জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, কমিটির বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুদক স্বাধীন স্বশাসিত সংস্থা। এর জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই। দুদককে তলব করার আগে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২০৩ ধারার আলোকে ও দুদক আইন ২০০৪ পাশাপাশি রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক মনে করেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আর জনগণের কাছে ওই সব প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারে সংসদ। তাই জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সংসদীয় কমিটি যে কাউকেই ডাকতে পারে, বিশেষ প্রয়োজনে তলব করতে পারে। তবে এর মাধ্যমে যেন মূল কাজে প্রভাব না পড়ে।
গত ২৭ অক্টোবর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দুদককে তলব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত না হওয়ায় কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই দিনের বৈঠকে। বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সদস্যদের বক্তব্য তুলে ধরে কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুদকের দায়িত্ব দুর্নীতিবাজ ধরা। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জলজ্যান্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেটা দুদকের চোখে পড়ে না। তাই প্রশ্ন উঠেছে, দুদককে ধরবে কে?’
বৈঠকে দুদককে বা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে কমিটি সংসদ সচিবালয়ের আইন কর্মকর্তাদের মতামত চাইলে তাঁরা ডাকা যাবে বলে জানান এবং এ-সংক্রান্ত সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি পড়ে শোনান।
দুদককে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা নিয়ে এর আগে ২০০৯ সালে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। ওই বছরের ১২ এপ্রিল সরকারি প্রতিষ্ঠানবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী, দুই কমিশনার হাবিবুর রহমান ও আবুল হাসান মনযুর মান্নানকে কমিটির বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য তলব করে। কিন্তু কমিশনের কেউ যাননি।
তবে ২০০৯ সালে দুদককে তলব করার বিষয়টি আর এবারের বিষয়টির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক দুদকের একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটি যদি মনে করে দুদকের অনুসন্ধান বা তদন্ত ঠিক হয়নি তাহলে তারা নিজেরাই একটি তদন্ত করতে পারে এবং সেটার প্রতিবেদন দুদকের কাছে পাঠাতে পারে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে পারে।
বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে দুদককে তলব করার বিষয়ে শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, এটা এখনো চলমান প্রক্রিয়া। অনুসন্ধান শেষ হয়েছে, মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করলে তদন্তে প্রভাব পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এ সময়ে না ডাকাটাই সমীচীন।
তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের। তিনি মনে করেন, সংসদীয় কমিটির অবস্থান যৌক্তিক। দুদককে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। এ ক্ষেত্রে দুদকের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক যদি সংসদীয় কমিটির আহ্বান এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। তাদের অবস্থান সম্পর্কে দৃঢ়তা থাকলে তারা অবশ্যই কমিটির মুখোমুখি হবে। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা জনগণের (সংসদের) কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কেন?


লেখক: এডভোকেট জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (রিগ্যান)
01711 970 318 | advocateregan@gmail.com | www.advocateregan.com |
আপনার যে কোন আইনী জিজ্ঞাসার জন্য এখানে ক্লিক করুন...


লেখাটি স্বত্ব সংরক্ষিত, অন্যত্র কপি/নকল বারিত।
তবে লেখকের স্বত্ব উল্লেখপূর্বক হুবহু প্রিন্ট অথবা শেয়ার করতে বাধা নেই।

দলিল রেজিস্ট্রির নিয়ম কি?

প্রশ্নটির উত্তর অতি ব্যাপক। সংক্ষেপে, সামাজিক মর্যাদা এবং আইনগত অধিকার রক্ষার জন্যই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা অতি জরুরি। রেজিস্ট্রেশন ব্যাতীত আপনি আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে সাক্ষ্যগত মূল্য বহন করে। রেজিস্ট্রেশন ব্যাতিত বিবাহ প্রমাণ করা কঠিন ফলে মেয়েদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় সবচেয়ে বেশি। দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি দাবির ক্ষেত্রে বিবাহ রেজিস্ট্রিশন বা বিবাহের কাবিননামা আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কাবিননামার গুরুত্ব ব্যাপক। কাবিননামায় বয়স উল্লেখ করতে হয় বিধায় বাল্য বিবাহ রোধও সম্ভব। এটি বিবাহিত ছেলে-মেয়ে উভয়ের ভবিষ্যত আইনগত অধিকার সংরক্ষণ করে। বিবাহ সম্পর্কে উভয় পক্ষ থেকেই যে কোন সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তখন কাবিননামা প্রমাণ পত্র হিসেবে কাজ করে।



অন্যদিকে, আইনের দৃষ্টিতে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তাই সকল বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা আইনত আবশ্যক।



বিবাহ রেজিস্ট্রেশন কী এবং কেন?

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে সরকারিভাবে বিবাহকে তালিকাভুক্তি করা। সরকারের নির্ধারিত ফরমে বিবাহের তথ্যবলী দিয়ে এই তালিকাভূক্তি করতে হয়। তালিকাভূক্তি ফরমটিকে কাবিননামাও বলে। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ সরকার নির্ধারিত কাজী বা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনটি ২০০৫ সালে সংশোধনী আনা হয় এবং বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

ওই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বা কাজী বিবাহ সম্পন্ন হবার সঙ্গে সঙ্গেই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন অথবা তিনি ছাড়া অন্য কেউ বিবাহ সম্পন্ন করলে ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বা কাজীর নিকট বিবাহের তথ্য প্রদান করতে হবে এবং কাজী উক্ত তথ্য প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন। যদি কেউ বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের এসব বিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে তার ২ (দুই) বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে। আইন অনুযায়ী কেউ যদি রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন তবে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।


উল্লেখ্য যে, রেজিস্ট্রেশন না হলে বিবাহ বাতিল হয় না তবে আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার সম্ভাবনা থাকে।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে হিন্দু পারিবারিক আইন অনুযায়ী হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের কোনো বিধি বিধান নেই। তবে ২০১২ সালে প্রণীত “হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন” অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধনের বিধান থাকলেও তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও এরূপ বিধান নেই। এসব ক্ষেত্রে ভবিষ্যত প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করে রাখা যেতে পারে।


কখন এবং কিভাবে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয় :

২০০৫ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) সংশোধিত আইন অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন হবার সাথে সাথে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তবে নিকাহ রেজিস্ট্রার ছাড়া বিবাহ সম্পন্ন হলে ৩০দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিকট বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হয়। রেজিস্ট্রি করতে রেজিস্ট্রেশন সরকারি ফি দিতে হয়। দেনমোহরের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হয়। ধার্য্যকৃত দেনমোহরের প্রতি হাজার বা তার অংশবিশেষের জন্য ১০ টাকা হারে রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি এর মোট পরিমাণ ১০০ টাকার কম হবে না এবং ৪০০০ টাকার উপর হবে না। এই ফি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এবং পরিবর্তন হয়ে থাকে। রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধের দায়িত্ব বরপক্ষের।


আইন অনুযায়ী বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বা শর্ত যেমন, বর কনের বয়স, উভয়ের সম্মতি, দেনমোহর, তালাক প্রদানের ক্ষমতা ইত্যাদি পূরণ সাপেক্ষে কাজী বা নিকাহ রেজিস্ট্রার বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন। খ্রিস্টান বিবাহের ক্ষেত্রে যিনি বিবাহ সম্পাদন করবেন তিনিই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবার পর কাজী উভয়পক্ষকে রেজিস্ট্রেশন ফরম বা কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রদান করবেন।




বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের সুফল-কুফল :
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করলে আইনগত কিছু সুফল পাওয়া যায় কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না করলে কুফলও রয়েছে অনেক, যেমন রেজিস্ট্রেশনের ফলে,


১) উভয় পক্ষ বিবাহ অস্বীকার করার আইনত সুযোগ থাকেনা এবং এর দ্বারা সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা আরোপিত হয়।
২) রেজিস্ট্রেশনের ফলে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নির্ণয় সহজ হয়।
৩) স্ত্রী তার প্রাপ্ত দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় বা দাবি করতে পারে।
৪) সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ণয় করতে সহজ হয়।
৫) স্বামী দ্বিতীয় বিবাহের জন্য উদ্যোগী হলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
৬) রেজিস্ট্রেশনের ফলে বাল্য বিবাহ রোধ সম্ভব হয়।
৭) রেজিস্ট্রেশনের ফলে স্ত্রী ডিভোর্স দেয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত হতে পারে।



অন্যদিকে, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে স্বামী বা স্ত্রীর আইনগত বৈধতা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য, অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা যায় না। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার ফলে স্বামী অথবা স্ত্রী উভয়ই আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত বা প্রতারিত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আবার, রেজিস্ট্রেশন না করা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। মোট কথা, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন একদিকে যেমন বাধ্যতামূলক অন্যদিকে এটি একটি সামাজিক এবং পারিবারিক প্রামাণ্য দলিল।

Playback=রাজন










আইনগুলো সব কেন রানাদের পক্ষে?


আইনগুলো সব কেন রানাদের পক্ষে?ডক্টর তুহিন মালিক


সমগ্র দেশ যখন সাভারের শত শত শ্রমিকের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করছে, তখন রানার বিরুদ্ধে মামলা হলো দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায়, যাতে বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানই আছে পাঁচ বছরের জেল। শত শত লাশের বিচারপ্রার্থী মানুষের সঙ্গে এ যেন পুলিশের এক নির্মম রসিকতা। জনদাবির ভয়াবহতা ও জনগণের চাপের মুখে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেটকেই। তিনি নির্দেশ দিলেন, ৩০৪(ক) ধারা নয়, বরং সংযোজন করতে হবে ৩০৪ ধারাকে। এই ধারায় যে কাজ দ্বারা মৃত্যু সংঘটন হয়, তার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান আছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় সংশোধিত ধারাগুলোতে আরো সংযোজন করলেন মারাত্মক আঘাতজনিত দণ্ডবিধির ৩২৫, ৩২৬ ধারা এবং হত্যাচেষ্টাজনিত ৩০৭ ধারাটি। এখানেও আইনের প্রয়োগে সমস্যা দেখা দিল। কেননা ৩০৪ ধারা সংযোজিত হলে এই ধারাগুলো আর প্রযোজ্য হবে না। এ ক্ষেত্রে এই ভুল ধারা সংযোজনের ফলে বিচারকালে তা আসামির পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই থেকে যায়। বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে, রানা প্লাজা জায়গাটির প্রকৃত মালিকানা নাকি রানার বাবার নামে। তাহলে তো হতাশার মাত্রা আরো বেশি দৃশ্যমান। অন্যদিকে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণের দায়ে ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারায় মামলা করা হলেও দুই প্রকৌশলীর কাউকেই মামলার কোনো এজাহারে রাখা হয়নি। তাই ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণের মামলায় ত্রুটিপূর্ণ এজাহারটি শুধু মামলার অসম্পূর্ণতাই নয়, বরং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১এ ধারায় ভবিষ্যতে যে উচ্চ আদালতে কোয়াশ বা বাতিল হবে না তার নিশ্চিয়তা কোথায়? কারণ এই অপরাধে প্রধান দোষী হচ্ছেন নির্মাণ প্রকৌশলীরা। কিন্তু প্রিন্সিপাল অ্যাকিউজ্ড্ বা মূল আসামিদের বাদ দিয়ে সহযোগীর বিচারপ্রক্রিয়াটি আদালতে বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। যদিও মন্দের ভালো এই আইনে তাদের সাত বছরের জেল হতো, বর্তমানে সেটাও কিন্তু ঝুঁকিতে রয়ে গেল।
এখন আসা যাক ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনে। যদিও মানুষের জীবনের ক্ষতি কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়, তবু আন্তর্জাতিক আইন থেকে শুরু করে বিশ্বের সব লিগ্যাল সিস্টেমে যতটুকু বেশি ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্তকে দেওয়া সম্ভব, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। উল্টোপথে হাঁটছি শুধু আমরা। কারণ এখানে মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়ে হয়তো ডলারের মূল্যকেই আমরা বেশি প্রধান্য দিয়ে থাকি। নতুবা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলওর সনদকে আমরা মানতে বাধ্য বলে তাতে স্বাক্ষর করার পরও কেন আমাদের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিতে হয় যে তারা ক্ষমতায় গেলে আইএলও সনদ অনুযায়ী দেশের শ্রম আইন সংশোধন করবে? অথচ তারাই আবার ক্ষমতায় এসে আইএলও সনদ বাদ দিয়ে মালিকদের 'সনদ' মতে শ্রম আইন সংশোধন করে। দেশে যেখানে সরকারি কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস নির্ধারিত, সেখানে কয় দিন আগের শ্রম আইনের সংশোধনীতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি রাখা হয়েছে মাত্র চার মাস। সেটাও আবার কেউ মানতে নারাজ। না হলে সাভারের ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দুটি শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনা আমাদের করুণভাবে দেখতে হতো না। আসলে যেখানে চার মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ২৪ হাজার টাকা মজুরি পরিশোধ না করে বরং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করাটা আইনের বিধান থাকে, সেখানে যেকোনো ব্যবসায়ীর জন্যই জরিমানা আদায় করাটা অধিক লাভজনক। কেননা আইএলও সনদ নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে সভা-সেমিনার আর মহান মে দিবসে শ্রমিকদের শোভাযাত্রার মাঝে অনেক আগেই যে হারিয়ে গেছে আমাদের শ্রমিক অধিকারের সনদটি।
১৯৬৫ সালের শ্রম আইনে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ছিল ৩০ হাজার টাকা। তখন মজুরি ছিল ১২৫ টাকা। কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রার মান ও দ্রব্যমূল্য আড়াই শ গুণ বাড়লেও ২০০৬ সালের শ্রম আইনে এই ক্ষতিপূরণ এক লাখ টাকা করা হয়, যা সম্প্রতি মন্ত্রিসভার নতুন শ্রম আইনের খসড়া অনুমোদনের সময় দুই লাখ টাকা করা হয়েছে; যদিও ১৮৫৫ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইনে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা হিসাব করে ক্ষতিগ্রস্তের গড় আয়ুর দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিতে এ রকম মারাত্মক অপরাধীর সম্পত্তি ক্রোক করে ট্রাস্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হতে পারে। এমনকি উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদেরও একটি ফৌজদারি ক্ষতিপূরণ আইন প্রণয়ন করার দাবি উঠেছে। এ ক্ষেত্রে পৃথক একটি শ্রমিক নিরাপত্তা আইনের বিষয়ও মানুষের দাবিতে এসেছে। আসলে গার্মেন্ট মালিকদের অহরহ বলা কমপ্লায়েন্স শব্দটি মনে হয় বিদেশি ক্রেতাদের সন্তুষ্টির জন্যই বেশি প্রযোজ্য। আমাদের দেশের বিদ্যমান আইনগুলোরও যে কমপ্লায়েন্স মানা বাধ্যতামূলক, সেটা যেন তারা মানতেই নারাজ। ব্যবসা পেতে হলে সব রকম কমপ্লায়েন্সে রাজি মালিকরা, দেশের গরিব শ্রমিকদের জীবনের কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে কেন এতটা উদাসীন হবেন? কারণ আইন যেখানে তৈরি হয়, সেই আইনসভায় বা সংসদে সরাসরি ২৬ জন সদস্য এখন গার্মেন্ট মালিকদের প্রতিনিধি।
আর প্রচ্ছন্নভাবে গার্মেন্ট ব্যবসায় জড়িত আরো অন্তত অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্য রয়েছেন, যা দেশের বর্তমান সর্ববৃহৎ বিরোধী দলের আসনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই যেখানে মালিকদের পাজেরো-প্রাডো গাড়ির জন্য বীমা করা আছে কোটি টাকার, গাড়ির প্রতিবছর প্রিমিয়াম দিতে হয় লাখ লাখ টাকার, সেখানে শ্রমিকের জন্য নেই কোনো বীমা সুবিধা। হ্যাঁ, আইনে আছে যে গোষ্ঠী বীমার আওতায় বাধ্যতামূলকভাবে ২০ জন শ্রমিকের বীমা সুবিধা রাখতে হবে। ব্যস, এতটুকুই। ২০ জনের জন্য রাখলেই যখন দায়িত্ব সম্পন্ন করা সম্ভব, তখন হাজারো শ্রমিকের জন্য কে অযথা খরচ করতে যাবে। তাও আবার বছরে মাত্র ১৭ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে কাজ হলে ১০০ শ্রমিকের জন্য বছরে ৮৫ হাজার টাকা কেন দিতে যাবে। হাজার শ্রমিকের জন্য বছরে সাড়ে আট লাখ টাকা খরচ না করে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্যাশন শো করাটাই বিজিএমইএর কাছে বেশি প্রয়োজনীয়। তা ছাড়া শত শত মানুষ হত্যা করে গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার চেয়ে কয়েক দিন জেলে থাকাটা যখন বেশি নিরাপদ, তখন এই আইন কার জন্য- এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় আমাদের এসেছে।
এ ধরনের গণহত্যার পর্যাপ্ত শাস্তির জন্য সংসদের এ অধিবেশনেই একটি 'গণহত্যা অপরাধ আইন' পাস করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এসব নরঘাতককে দ্রুত বিচারের আওতায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের আইন সংবিধানপরিপন্থী হবে না বলে আমাদের সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে নিশ্চয়তা দেওয়া আছে। সেই সঙ্গে আমাদের সংবিধানের ৪৭-ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই আইনে আগের যেকোনো সময়ের সংঘটিত অপরাধের বিচার রেট্রোস্পেকটিভ ইফেক্টে করা যাবে। এমনকি এসব ঘাতক সংবিধানের অধীনে কোনো প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে কোনো ধরনের আবেদন করার যোগ্যতা হারাবে বলে সংবিধানের ৪৭-ক(২) অনুচ্ছেদে নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। তাই শত শত মানুষের গণহত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদানে 'গণহত্যা অপরাধ আইন' সংসদে এই মুহূর্তে প্রণয়ন করাই হবে জনগণের একমাত্র দাবি। অন্য আরো বিকল্প হয়তো আছে, কিন্তু সেগুলো আগের মতোই অন্ধকারে হারিয়ে যাবে নিশ্চিতভাবে।

লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
malik.law.associates@hotmail.com

সূত্র:http://www.kalerkantho.com/print_edition/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1231&cat_id=2&menu_id=20&news_type_id=1&index=1&archiev=yes&arch_date=03-05-2013#.VjsPwZP0o4k

ঐশির রায় ১২ নভেম্বর









ভ্যাট কি?


সহজ ভাষায় ভ্যাট
ড. মোঃ আবদুর রউফ | প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩
প্রশ্ন : আমার একজন ক্লায়েন্ট রেস্তোরাঁ সেবা প্রদান করেন। রেস্তোরাঁতে বিদেশী একটি রেস্তোরাঁর ব্র্যান্ডনেম এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সে বাবদ ওই বিদেশী রেস্তোরাঁকে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। পরিশোধিত মূল্যের ওপর আমার ক্লায়েন্ট ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিজে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি খাতে জমা প্রদান করেন। বিদেশী রেস্তোরাঁর ব্র্যান্ডনেম ও প্রযুক্তি ব্যবহার আমার ক্লায়েন্টের রেস্তোরাঁর উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা এবং পরিশোধিত ভ্যাট তিনি রেয়াত নিতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে অনুগ্রহ করে মতামত দিন। [অ্যাডভোকেট মোঃ আনোয়ার হোসেন, সভাপতি, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব ভবন (নীচতলা), সেগুনবাগিচা, ঢাকা।]
উত্তর : বিদেশী রেস্তোরাঁর ব্র্যান্ডনেম ও প্রযুক্তি ব্যবহার আপনার ক্লায়েন্টের রেস্তোরাঁর উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আপনার ক্লায়েন্ট পরিশোধিত ভ্যাট রেয়াত নিতে পারবেন। মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২ এর দফা (গ) এর উপ-দফা (অ)-তে বর্ণিত আছে যে, আমাদের দেশের ভ্যাট ব্যবস্থায় কি কি উপকরণ এবং কি কি উপকরণ নয়। মূলত শ্রম, ভূমি, ইমারত, অফিস যন্ত্রপাতি ও যানবহান উপকরণ নয়। এবং মূলত সব ধরনের কাঁচামাল, গ্যাস বা অন্য কোনো জ্বালানি, মোড়ক সামগ্রী, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ভ্যাটযোগ্য সেবা হল উপকরণ। আপনার ক্লায়েন্ট বিদেশী একটি রেস্তোরাঁর ব্র্যান্ডনেম এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ বিদেশ থেকে ওই সেবাগুলো আমদানি করেন। ব্র্যান্ডনেম ব্যবহারের বিপরীতে যে মূল্য পরিশোধ করা হয়, তাকে রয়্যালটি বলা যায়। প্রযুক্তি ব্যবহার ‘অন্যান্য বিবিধ সেবা’ হিসেবে শ্রেণীবিন্যাস করা যায়। আবার, সম্পূর্ণ বিষয়টিকেও ‘অন্যান্য বিবিধ সেবা’ হিসেবে শ্রেণীবিন্যাস করা যায়। উপরের বিবরণ অনুসারে, এই সেবাটি উপকরণ। কি কি বিষয়ের ওপর উপকরণ কর রেয়াত পাওয়া যাবে না তা একই আইনের ধারা ৯ এ উল্লেখ আছে। রয়্যালটি বা অন্যান্য বিবিধ সেবা ধারা ৯ এ উল্লেখ নেই। তাই, আপনার ক্লায়েন্ট কর্তৃক বিদেশী রেস্তোরাঁর ব্র্যান্ডনেম এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর পরিশোধিত ভ্যাট রেয়াত নেয়া যাবে। উপকরণ কর রেয়াত নিতে হলে আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে বিল-অব-এন্ট্রি এবং স্থানীয়ভাবে ক্রয়কৃত উপকরণের ক্ষেত্রে ভ্যাট চালান দখলে থাকতে হয়। বর্ণিত ক্ষেত্রে আপনার ক্লায়েন্টের কাছে এমন কোনো দলিল নেই। তবে, আইনের ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ঞ) এর শর্তাংশে উল্লেখ আছে যে, সেবা আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভ্যাট সরকারি ট্রেজারিতে জমা দেয়ার প্রমাণপত্র অর্থাৎ ট্রেজারি চালান থাকা সাপেক্ষে রেয়াত নেয়া যাবে। তাই, যেহেতু আপনার ক্লায়েন্ট নিজে ওই ভ্যাট পরিশোধ করেছেন এবং পরিশোধের প্রমাণস্বরূপ তার কাছে ট্রেজারি চালান রয়েছে, সেহেতু আপনার ক্লায়েন্ট ওই ভ্যাট রেয়াত নিতে পারবেন। আরও উল্লেখ্য যে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন রেস্তোরাঁ হলে উপকরণ কর রেয়াত পাওয়া যাবে না, কারণ, সেখানে ভ্যাটের হার ৬.০ শতাংশ। পক্ষান্তরে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁ হলে উপরকণ কর রেয়াত পাওয়া যাবে, কারণ, সেখানে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ।
উত্তরদাতা : পরিচালক, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল এবং প্রকল্প উপ-পরিচালক, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন প্রকল্প, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ই-মেইল: roufcus@yahoo.com

সূত্র: http://www.jugantor.com/industry-trade/2013/12/18/50857

লিমিটেড কোম্পানী গঠন প্রক্রিয়া

লিমিটেড কোম্পানী গঠন প্রক্রিয়া



ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চালানোর এক পর্যায়ে অনেকেই সেটিকে কোম্পানীতে রুপান্তরিত করেন কিছু আইনগত সুবিধা নেবার জন্য। কোম্পানী গঠন করতে হলে সেটির একটি নাম দিতে হবে। কাঙ্খিত নামে রেজিষ্ট্রেশন করতে গেলে প্রথমে নামের ছাড়পত্র বা নেম ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। এরপর কিছু প্রক্রিয়া মেনে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন ফি অনুমোদিত মূলধনের ওপর নির্ধারিত হয়ে থাকে। ঢাকা অঞ্চলের জন্য এ কাজ করতে হলে কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনের সাত তলায় অবস্থিত নিবন্ধন দপ্তরে যেতে হবে। এ কাজটি সনাতন পদ্ধতিতে করা যায় আবার নিবন্ধন দপ্তরের কিওস্ক ব্যবহার করে অনলাইনেও করা যায়।

ঢাকা জোনের নিবন্ধন দপ্তর:
টিসিবি ভবন (সাত তলা), কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
টেলিফোন +৮৮-০২-৮১৮৯৪০১, ৮১৮৯৪০৩
ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৮১৮৯৪০২
ই-মেইল: rjsc@roc.gov.bd
ওয়েবসাইট: http://www.roc.gov.bd

প্রক্রিয়া:
নিবন্ধকের কাছে নিবন্ধন ফি দিয়ে কোম্পানীর তিনটি সম্ভাব্য নাম প্রস্তাব প্রস্তাব করতে হবে। আগে নিবন্ধন করা হয়েছে এমন নাম পাওয়া যাবে না। http://www.roc.gov.bd সাইট থেকে নামের একটি তালিকা দেখা যেতে পারে। নাম অনুমোদনের পর দু’জন সাক্ষীর সামনে সংঘ বিধি ও সংঘ স্মারকে সাক্ষর করতে হয়। এই সংঘ বিধি ও স্মারকে বিশেষ স্ট্যাম্প লাগাতে হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হয়। টাকার পরিমাণ অনুমোদিত মূলধনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে।

  • প্রাইভেট কোম্পানী হলে স্ট্যাম্পযুক্ত সংঘবিধি, তিন কপি স্মারক ও সংঘবিধি পূরণ করে ১, ৬, ৯, ১০ ও ১২ ছাড়পত্র, বিশেষ স্ট্যাম্প ক্রয় সংক্রান্ত চালানের ফটোকপি জমা দিতে হয়।
  • পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী গঠনের ক্ষেত্রে এসব কাগজপত্র ছাড়াও প্রসপেক্টাসের বিকল্প বিবরণী, ব্যবসা শুরুর ঘোষণা পত্র এবং  বিশেষ ক্ষেত্রে ফরম ১১ জমা দিতে হয়।
  • রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস কোম্পানীগুলোর মালিকানা এবং তালিকভুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারক করে। প্রাইভেট, পাবলিক এবং বিদেশী কোম্পানীর রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াও বাণিজ্যিক সংস্থা ও যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানীর রেজিস্ট্রেশনের কাজ করা হয় এখানে।

নেম ক্লিয়ারেন্স:
প্রস্তাবিত নামের অনুমোদন নেয়া বা নেম ক্লিয়ারেন্স নিতে প্রতি নামের জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হয়।

সংঘ স্মারকে ৫০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প এর অতিরিক্ত স্ট্যাম্প লাগানোর নিয়ম:

মূলধনের পরিমাণ
টাকার পরিমাণ
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত
২,০০০ টাকা
১০ লাখ এক টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত
৪,০০০ টাকা
৩ কোটির ঊর্ধ্বে যোকোন অংকের জন্য
১০,০০০ টাকা

রেজিস্ট্রেশন ফি
মোট ছয়টি কাগজ জমা দিতে হয়, পাঁচটি পূরণকৃত ফরম এবং একটি সংঘ স্মারক। প্রতি কাগজের জন্য ২০০ টাকা করে মোট ১,২০০ টাকা জমা দিতে হয়।

অনুমোদিত মূলধনের জন্য ফি:
মূলধনের পরিমাণ
ফি-এর পরমাণ
২০,০০০ টাকা পর্যন্ত
৩৬০ টাকা
২০,০০০ টাকা অতিক্রমের পর ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০,০০০ টাকার জন্য
১৮০ টাকা
৫০,০০০ টাকা অতিক্রমের পর ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০,০০০ টাকার জন্য
৪৫ টাকা
৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি দশ হাজারের জন্য
২৮ টাকা
এরপর প্রতি এক লাখের জন্য
৪৫ টাকা

ওসিসহ চার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা


ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে হত্যা

ওসিসহ চার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সালতা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহীন মোল্লাকে নির্যাতন করে হত্যা করার ঘটনায় মাদারীপুরের ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) চার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার নিহত শাহীনের মা রেবা বেগম বাদী হয়ে মাদারীপুর মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে এ মামলা করেন।
আরজির বিবরণ অনুযায়ী, গত ৮ জুন সন্ধ্যার পর ডাসার-মেদাকুল সংযোগ সেতুর ওপর বসে গৌরনদী উপজেলার পূর্ব সমরসিংহ গ্রামের দুবাইপ্রবাসী মোস্তফা মোল্লার ছেলে শাহিন মোল্লা (২০) এবং শাহ আলম (২৪) ও মুকিত (২৪) গল্প করছিলেন। এ সময় টহলে থাকা মাদারীপুরের ডাসার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মীর নাজমুল হাসান, কনস্টেবল ফরহাদ হোসেন ও সালাউদ্দিন তিনজনকে ধরে থানায় নিয়ে যান। পরে আটক শাহ আলম ও মুকিতের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে দুজনকে ছেড়ে দেন। তবে শাহিনের পরিবার টাকা দিতে না পারায় তাঁকে আটকে রাখেন। ওই রাতে শাহীনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের পর শাহিনের শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে পরদিন সকালে পাঁচটি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার দেখিয়ে মাদক মামলায় মাদারীপুর আদালতে শাহীনকে সোপর্দ করেন। ১৪ জুন রাতে হাজতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পর শাহীন মারা যান।
মামলার আইনজীবী ইয়াদ মোর্শেদ সজল বলেন, আদালত মামলা আমলে নিয়ে র্যাব-৮-এর পরিচালককে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারী মামলা

বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারী মামলা


মোটাদাগে ফৌজদারী মামলাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, একটি আমলযোগ্য মামলা, অন্যটি আমল অযোগ্য মামলা। আবার আমলযোগ্য মামলাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, একটি জি আর বা পুলিশী মামলা অন্যটি সি আর বা নালিশী মামলা।

 আমলযোগ্য মামলা:
আইন মোতাবেক কিছু অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন। এসব অপরাধে যে মামলা হয় তাই আমলযোগ্য মামলা। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪(১) উপধারায় ক্লজ চ-এ আমলযোগ্য মামলা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

আমল অযোগ্য মামলা:
কিছু অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে না। অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে প্রসিকিউশন রিপোর্ট বা নন-এফআইআর মামলা আদালতে দাখিল করে। এগুলো আমল অযোগ্য মামলা। এধরনের অপরাধের মামলা কোর্টের নন-জিআর রেজিস্টার ভুক্ত হয়ে পরিচালিত হয় হয় বলে এ মামলাকে নন-জিআর মামলা বলা হয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪ (১) উপধারার ক্লজ ঢ-এ আমল অযোগ্য মামলা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

নালিশী বা সিআর মামলা:
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরাসরি গিয়েও কোর্ট ফি দিয়ে বিচার প্রার্থনা করা যায়। এক্ষেত্রে কা:বি: ২০০ ধারায় শপথ নিয়ে আবেদনের উল্টো পিঠে জবানবন্দি রেকর্ড করতে হয়। কোর্ট রেজিস্টারে মামলা এন্ট্রি হয়ে পরিচালিত হওয়ার কারণে এগুলোকে সিআর মামলা বলা হয়।

পুলিশী মামলা:
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এজাহার দায়েরের মাধ্যমে যে মামলা শুরু হয় তাই পুলিশী মামলা নামে পরিচিত। পুলিশী মামলাকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়:

জি আর মামলা:
থানায় কোন আমলযোগ্য অপরাধ ঘটার খবর পেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কা:বি: ১৫৪ ধারা অনুসারে মামলা করে আদালতে এফআইআর দাখিল করে কা:বি: ১৫৬ ধারা অনুসারে মালার তদন্ত শুরু করেন। এটিই জি আর মামলা। থানা থেকে এফআইআর আদালতে আসার পর কোর্ট ইন্সপেক্টর/সাব-ইন্সপেক্টর বা জিআরও (জেনারেল রেজিস্টার অফিসার) উক্ত এফআইআর-টি মামলা হিসেবে কোর্টের জেনারেল রেজিস্টারে এন্ট্রি করে তা দ্রুত ম্যাজিস্ট্রেট এর নজরে আনেন।

নন জি আর মামলা:
আবার থানায় আমলযোগ্য মামলা সংঘটিত হওয়ার সংবাদ পেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য না করে পুলিশ প্রবিধান এর প্রবিধি ৩৭৭ অনুসারে জিডি এন্ট্রি করে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন রিপোর্ট দায়ের করতে পারেন। এগুলো নন-জিআর মামলা নামে পরিচিত।

সূত্র: http://www.online-dhaka.com/619_689_2114_0-various-types-of-criminal-cases-dhaka.html

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিথ্যা মামলার প্রতিকার



লেখক: এডভোকেট জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (রিগ্যান)
01711 970 318 | advocateregan@gmail.com | www.advocateregan.com | Facebook |


লেখাটি স্বত্ব সংরক্ষিত, অন্যত্র কপি/নকল বারিত।
তবে স্বত্ব উল্লেখপূর্বক হুবহু প্রিন্ট অথবা শেয়ার করতে বাধা নেই।



যদি কেউ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এ আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তবে তার বিরুদ্ধে একই আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী আপনি অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।




মিথ্যা মামলা, অভিযোগ দায়ের ইত্যাদির শাস্তি

১৭৷ (১) যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোন ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান তাহা হইলে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করাইয়াছেন উক্ত ব্যক্তি অনধিক সাত বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷


(২) কোন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা (১) এর অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করিতে পারিবে৷

মানব পাচারের মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের দণ্ড


মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী মানব পাচারের মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের দণ্ড নিম্মরূপ;



মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের দণ্ড
১৫। (১) কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধন করিবার উদ্দেশ্যে এই আইনের অধীন মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিলে বা আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করিলে বা অন্য কোন ব্যক্তিকে তাহা করিতে বাধ্য করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনাল কোন লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অথবা তাহার স্বীয় ক্ষমতায় উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত অপরাধ আমলে লইয়া তাহার বিচার শুরু করিতে পারিবে এবং প্রয়োজনে, কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, মূল মামলার বিচার স্থগিত করিতে পারিবে।

হঠাৎ মিথ্যা মামলা হলে...

হঠাৎ মিথ্যা মামলা হলে...

তানজিম আল ইসলাম­ | আপডেট: 
অলংকরণ : তুলিকেউ আপনার বিরুদ্ধে শত্রুতা করে মিথ্যা মামলা ঠুকে দিলেন। আপনি মামলার খবর শুনে যতটা হতবাক, তার চেয়েও দুশ্চিন্তায় পড়লেন, কীভাবে মিথ্যা মামলার অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন। মনে রাখতে হবে, আপনি অপরাধী, না নিরপরাধ, সেটি মামলায় অভিযুক্ত হলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। আইনের চোখে আপনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিরপরাধ। ধরুন, আপনার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা হলো। আপনি দোষী বা নির্দোষ, সেটি পরে প্রমাণিত হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে আপনি যেন এ মামলা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারেন, সেই চেষ্টা করতে হবে। যদি আপনার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়, তাহলে এজাহারের কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করুন। মামলার এজাহারে দেখতে হবে, অভিযোগগুলো জামিনযোগ্য বা অযোগ্য কি না।
অভিযোগ তেমন গুরুতর না হলে এবং জামিনযোগ্য হলে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। অনেক সময় অভিযোগ জামিন-অযোগ্য হলে অনেককে হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতে দেখা যায়। হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই নিম্ন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে। আদালতে প্রতি তারিখে হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আপনার জামিন বাতিল করে দিতে পারেন আদালত। জামিন সাধারণত পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার আগেই চাইতে হয়। তবে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে, তা প্রমাণের চেষ্টা করুন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন। চার্জশিট বা অভিযোগপত্র হয়ে গেলে আপনার মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হবে। অভিযোগ গঠনের দিন আপনাকে হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। তখন আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।
যদি এমন হয় যে আপনি জানতে পারলেন না, আপনার বিরুদ্ধে থানায় এজাহার হয়েছে। পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেপ্তার করল। আপনাকে থানায় নিয়ে গেল। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। তখন আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। যদি রিমান্ড চায় পুলিশ, তাহলে আপনার আইনজীবীর উচিত হবে রিমান্ড বাতিলের জন্য আবেদন করা। যদি জামিন দেন আদালত, তাহলে একজন পরিচিত জামিনদারের জিম্মায় আপনার জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। যদি জামিন না হয়, তাহলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।
যদি থানায় মামলা না হয়ে আদালতে মামলা (সিআর মামলা) হয়, তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন। মনে রাখতে হবে, সিআর মামলায় অভিযুক্ত সব আসামি হাজির হলেই বিচারের জন্য মামলাটি বদলি করা হয়। আপনি কোনো কারণে হাজির না হলে আপনার জামিন বাতিল হতে পারে। পর্যায়ক্রমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হতে পারে। এতে হাজির না হলে আপনার মালামাল ক্রোকের আদেশ হতে পারে এবং আপনার অনুপস্থিতিতেই বিচার হতে পারে। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণে আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আপনি প্রচলিত আইনেই মামলা দায়ের করতে পারেন।
যদি আপনার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মোকদ্দমা হয়, তাহলে জবাব দাখিলের জন্য আদালত আপনাকে সমন পাঠাবেন। নির্ধারিত তারিখে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দাখিল করতে হবে। পরবর্তী সময়ে মোকদ্দমা ধারাবাহিকভাবে এগোবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সূত্র: প্রথম আলো

রাজন হত্যা সিলেটে শিশু রাজন হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী


ত্যাজ্যপুত্র করলেই পুত্র ত্যাজ্য হয়?

ত্যাজ্যপুত্র করলেই পুত্র ত্যাজ্য হয়?

তানজিম আল ইসলাম | আপডেট:  | 

অলংকরণ: তুলিসিনেমায় ত্যাজ্যপুত্র কথাটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনও সিনেমার থেকে কম নাটকীয় নয়। ফলে অনেক সময় অভিভাবক ছেলের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। অনেকে হলফনামার মাধ্যমে নোটারি পাবলিকের সামনে সন্তানকে ত্যাজ্য বলে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমাদের দেশের নাটক-সিনেমাতে তো ঘোষণা করামাত্রই পুত্র ত্যাজ্য হয়ে যায়। সমাজেও ত্যাজ্যপুত্র ধারণাটি বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু প্রচলিত আইনে ত্যাজ্যপুত্রের ঘোষণার কোনো ভিত্তি নেই। এটি নিছক একটি ভ্রান্ত ধারণা। ত্যাজ্য বলে ঘোষণা করলেই পুত্র ত্যাজ্য হয়ে যায় না। এটি লোকমুখে প্রচলিত একটি শব্দ। আইন একে বৈধতা দেয় না।
আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, যদি কোনো মা-বাবা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন তবে সেই সন্তান চিরতরে তাঁর মা-বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। অনেক সময় দেখা যায় যে বাবা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন এবং হলফনামা করে লিখে দেন যে তাঁর মৃত্যুর পর সেই সন্তান সম্পত্তির কোনো অংশীদার হবেন না। এ ধরনের ঘোষণার আদৌ কোনো আইনি ভিত্তি নেই। মুসলিম পারিবারিক আইনে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে কারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন এবং তাঁদের অংশ কতটুকু হবে। মুসলিম আইন অনুযায়ী জন্মসূত্রেই কোনো সন্তান তাঁর পরিবারের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন করেন এবং তাঁদের এ অধিকার কোনোভাবেই খর্ব করা যায় না।
তবে কোনো মা-বাবা দান, উইল বা বিক্রয়ের মাধ্যমে তাঁদের সম্পত্তি যে কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। এখানে মনে রাখতে হবে মুসলিম আইনে উইলের দ্বারা এক-তৃতীয়াংশের বেশি হস্তান্তর করা যায় না এবং ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা কার্যকর হবে। জীবিতকালে কোনো মা-বাবা তাঁদের সম্পত্তি অন্য কাউকে যথাযথ উপায়ে দান না করে গেলে কিংবা বিক্রয় করে না গেলে মৃত্যুর পর তাঁদের সন্তানেরা অবধারিতভাবেই উত্তরাধিকারী হিসেবে সেই রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশীদার হবেন।
কিন্তু জীবিতকালে শুধু ত্যাজ্যপুত্র বলে ঘোষণা করে ভবিষ্যতে সন্তানেরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন বলে দিলেই সন্তানেরা ত্যাজ্য হয়ে যাবেন না। সন্তানেরা অবশ্যই বাবা-মায়ের সম্পত্তির অংশীদার হবেন। যেকোনো দলিল সম্পাদন কিংবা হলফনামার মাধ্যমে ত্যাজ্য করার ঘোষণা আইনের চোখে অচল এবং আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করার সুযোগ নেই। যদি এমন হয় বাবা-মা ত্যাজ্যপুত্র বলে সন্তানদের ঘোষণা দিয়ে গেছেন এবং এ জন্য অন্য অংশীদারেরা তাঁদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন তাহলে সন্তানেরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
চাইলে দেওয়ানি আদালতে বাবা-মায়ের করা দলিলটি বাতিল চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। কোনো বাবা-মা যদি তাঁদের অবাধ্য সন্তানকে কোনো সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চান তাহলে জীবিতাবস্থায় ওই সম্পত্তি অন্য কাউকে দান করে কিংবা বিক্রি করে সম্পত্তির দখল ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে যেটুকু সম্পত্তিই বাবা-মা নিজের নামে রেখে যান না কেন তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁর বৈধ উত্তরাধিকারীরা এ সম্পত্তির অংশীদার হবেন। এ থেকে জীবিত অবস্থায় কাউকে বঞ্চিত করার ঘোষণা মুসলিম আইন অনুযায়ী করা যাবে না।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
http://www.prothom-alo.com/life-style/article/328099/ত্যাজ্যপুত্র-করলেই-পুত্র-ত্যাজ্য-হয়

আইন না থাকায় সম্পত্তিপাচ্ছে না দত্তক শিশুরা

আইন না থাকায় সম্পত্তিপাচ্ছে না দত্তক শিশুরা
শামীমা মিতু এখন মা কথায় কথায় গায়ে হাত তোলেন, দাদিও বকাঝকা করেন। বাড়ির কেউ আমাকে দেখতে পারে না। সবাই বলে আমি নাকি এ বাড়ির কেউ না। আমাকে রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে। এভাবেই ১২ বছরের নাজলা (ছদ্ম নাম) পরিবারে তার অবহেলার কথা জানায়। নাজলা বলে, আগে আমি জানতামই না, এরা আমার আসল মা-বাবা নয়। এক বছর আগে আমার ছোট বোন জন্ম নেওয়ার পর থেকে তারা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। কথা হয় নাজলার বাবার সঙ্গে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, অনেক চেষ্টার পরও সন্তান নিতে পারছিলাম না। তখন একটি শিশুনিবাস থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে নাজলাকে পোষ্য নেই। নিজের মেয়ে হওয়ার পর বদলে গেছে আমার স্ত্রী। এখন আর নাজলাকে সহ্য করতে পারে না। নাজলাকে যেন কোনো সম্পত্তি না দেওয়ার পক্ষে সে।শুধু নাজলাই নয়, দেশে শিশু দত্তক আইন না থাকায় অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে এমন অনেক শিশু। সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। দত্তকের বিধান রয়েছে অভিভাবকত্ব আইনে। অভিভাবকত্ব আইনের মাধ্যমে দত্তক নিতে জটিলতার কারণে মানুষ উৎসাহিত হয় না। ফলে কোনো পরিবারের সানি্নধ্যে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বহু এতিম শিশুকে। আইন না থাকায় সন্তানহীন দম্পতিও আইনগতভাবে কোনো শিশুকে দত্তক নিতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আইনি প্রক্রিয়ার ঝামেলার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চুক্তির মাধ্যমে শিশু পোষ্য দেওয়া হয়। এটাকে শিশু কেনাবেচাও বলা হয়। টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান পোষ্য দেন বা বিক্রি করেন। যেখানে চুক্তিপত্রে সই করতে হয়, তারা আর কখনও ওই শিশুটির মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবেন না এবং অভিভাবক হিসেবে কোনো দাবি করতে পারবেন না।আবার অনেকে শিশু পোষ্য নিয়ে গৃহ শ্রমিক হিসেবে কাজ করান। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করেন। এমনি একজন শিশু ১১ বছরের হাসনা (ছদ্ম নাম)। ৪ বছর বয়সে একটি শিশুসদন থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিল একটি পরিবার। ছোট বোন জন্মের পর থেকে পরিবারের সবাই তার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। কয়েকমাস পরে তার ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে পালিয়ে শিশুসদনে ফেরত আসে হাসনা। শিশুনিবাসের পরিচালক বলেন, সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিও শিশু পোষ্য নিয়ে তাদের পারিবারিক পরিবেশ দেন না। এমনকি তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতনও করেন। এ কারণে এখন আর শিশুদের পোষ্য দেওয়া হয় না।চিলড্রেন রাইটস কনভেনশনের (সিআরসি) অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী, আন্তঃদেশীয় দত্তক স্বীকৃৃত। বাংলাদেশ এ বিধানটির ক্ষেত্রে সম্মতি স্থগিত রেখেছে (রিজার্ভ ক্লজ)। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বলা আছে, শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্র দত্তক পদ্ধতিকে স্বীকৃতি ও অনুমোদন দেবে। বাংলাদেশের আইনে দত্তক দেওয়া বা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। তবে গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট অনুসারে সন্তান পোষ্য নেওয়া যায়। এদিকে বাংলাদেশে হিন্দু আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান থাকলেও শুধু ছেলেশিশু দত্তক নেওয়া যাবে। হিন্দু পুরুষ বিবাহিত, অবিবাহিত বা বিপত্নীক যা-ই হোক না কেন, তার দত্তক নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার সীমিত। একজন অবিবাহিত নারী দত্তক নিতে পারেন না। বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি দরকার, এমনকি বিধবা হিন্দু নারী দত্তক গ্রহণ করতে চাইলে তাকে স্বামীর মৃত্যুর আগে দেওয়া অনুমতি দেখাতে হবে। আর মুসলিম আইনে দত্তক গ্রহণ স্বীকৃত নয়। খ্রিস্ট ধর্মেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দত্তক নেওয়ার বিধান নেই।এ প্রসঙ্গে মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সমকালকে বলেন, দত্তক আইন না থাকাতে সমস্যা হচ্ছে। এমন আইন করা উচিত, যাতে শিশুটি পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। দত্তক শিশুর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ দেশে আইনি প্রক্রিয়ায় নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে শিশুর আইনি অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা যায়। দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন ব্যক্তি কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব পেতে চাইলে তাকে পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র লাগবে। আইন কমিশন দত্তক আইন প্রণয়নের বিষয়ে সরকারকে তাগাদা দিয়ে আসছে। বছরের শুরুতে আইন কমিশন দত্তক আইন প্রণয়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি সুপারিশপত্র পাঠালেও এ ব্যাপারে এখনও কোনো আলোচনা শুরু হয়নি।

http://archive.samakal.net/print_edition/details.php?news=17&action=main&option=single&news_id=363457&pub_no=1507&view=archiev&y=2013&m=08&d=25