Hot!

দুদকের জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই!

দুদকের জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই!

মোর্শেদ নোমান | আপডেট:  | 

বেসিক ব্যাংকে কেলেঙ্কারিবেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডাকা নিয়ে পুরোনো বিতর্ক নতুনভাবে শুরু হয়েছে। সংসদীয় কমিটি দুদককে ডাকতে পারে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছে দুদক। আর সংসদীয় কমিটি বলছে, সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী দুদককে ডাকা যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি যেসব নথি পেয়েছে তাতে স্পষ্ট যে বেসিক ব্যাংকের টাকা লুটের সঙ্গে জড়িত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এর পরিচালনা পর্ষদ বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত দুদকের কর্মকর্তা অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধিকে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হবে। এ বিষয়ে স্পিকারের সঙ্গে পরামর্শ করে শিগগিরই চিঠি পাঠানো হবে।
দুদক যদি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হাজির না হয় তাহলে কমিটি কী করবে জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, কমিটির বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুদক স্বাধীন স্বশাসিত সংস্থা। এর জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই। দুদককে তলব করার আগে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২০৩ ধারার আলোকে ও দুদক আইন ২০০৪ পাশাপাশি রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক মনে করেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আর জনগণের কাছে ওই সব প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারে সংসদ। তাই জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সংসদীয় কমিটি যে কাউকেই ডাকতে পারে, বিশেষ প্রয়োজনে তলব করতে পারে। তবে এর মাধ্যমে যেন মূল কাজে প্রভাব না পড়ে।
গত ২৭ অক্টোবর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দুদককে তলব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত না হওয়ায় কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই দিনের বৈঠকে। বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সদস্যদের বক্তব্য তুলে ধরে কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুদকের দায়িত্ব দুর্নীতিবাজ ধরা। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জলজ্যান্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেটা দুদকের চোখে পড়ে না। তাই প্রশ্ন উঠেছে, দুদককে ধরবে কে?’
বৈঠকে দুদককে বা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে কমিটি সংসদ সচিবালয়ের আইন কর্মকর্তাদের মতামত চাইলে তাঁরা ডাকা যাবে বলে জানান এবং এ-সংক্রান্ত সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি পড়ে শোনান।
দুদককে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা নিয়ে এর আগে ২০০৯ সালে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। ওই বছরের ১২ এপ্রিল সরকারি প্রতিষ্ঠানবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী, দুই কমিশনার হাবিবুর রহমান ও আবুল হাসান মনযুর মান্নানকে কমিটির বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য তলব করে। কিন্তু কমিশনের কেউ যাননি।
তবে ২০০৯ সালে দুদককে তলব করার বিষয়টি আর এবারের বিষয়টির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক দুদকের একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটি যদি মনে করে দুদকের অনুসন্ধান বা তদন্ত ঠিক হয়নি তাহলে তারা নিজেরাই একটি তদন্ত করতে পারে এবং সেটার প্রতিবেদন দুদকের কাছে পাঠাতে পারে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে পারে।
বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে দুদককে তলব করার বিষয়ে শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, এটা এখনো চলমান প্রক্রিয়া। অনুসন্ধান শেষ হয়েছে, মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করলে তদন্তে প্রভাব পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এ সময়ে না ডাকাটাই সমীচীন।
তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের। তিনি মনে করেন, সংসদীয় কমিটির অবস্থান যৌক্তিক। দুদককে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। এ ক্ষেত্রে দুদকের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক যদি সংসদীয় কমিটির আহ্বান এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। তাদের অবস্থান সম্পর্কে দৃঢ়তা থাকলে তারা অবশ্যই কমিটির মুখোমুখি হবে। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা জনগণের (সংসদের) কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।

0 comments:

Post a Comment