Hot!

মুসলিম নিকাহনামা, একটি বৈষম্যমূলক দেওয়ানি চুক্তি



দিলরুবা সরমিন
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী


মুসলিম আইন অনুযায়ী ‘বিবাহ’ বিষয়টি একজন মুসলিম নারী ও পুরুষের মাঝে এটি একটি ‘সিভিল কনট্রাক্ট বা দেওয়ানি চুক্তিনামা।’ এই চুক্তি যেকোনো পক্ষ যেকোনো সময় চুক্তির যেকোনো শর্ত ভঙ্গ হলে একে অপরকে তালাক দিতে পারে বা চুক্তি বাতিল করতে পারে। বিজ্ঞজনের মতে, এটি একটি সর্বাধুনিক পদ্ধতি। কারণ এখানে চমৎকারভাবে মানবমুক্তির একটি দিগন্ত উন্মোচিত করা আছে। বিষয়টিকে নেতিবাচক ভাবার কোনোই কারণ নেই। মানুষ কেউই যে আসলে কারো দাস নয় বা কোনো শর্ত দিয়ে কোনো মানুষকেই কোনো বন্ধনেই আবদ্ধ রাখা যায় না, এটি তার একটি উদাহরণ। যেটি খুবই মানবিক ও আধুনিক।

আমাদের দেশে যেই নিকাহনামাটি বর্তমানে প্রচলিত সেটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, এই চুক্তির মমধ্যে ফাঁকফোকর বা বৈষম্যগুলো। কী আছে এই চুক্তিতে? চুক্তির ১ নং কলামে আছে যেখানে বিবাহ কার্য নিষ্পন্ন হইয়াছেÑ নিয়ম অনুয়ায়ী প্রতিটি এলাকায় কাজিদের জুরিশডিকশন ভাগ করা আছে আর সেই অনুযায়ী তাদের এলাকার বিয়ে তাদেরই নিবন্ধন করার কথা। যদিও এলাকায় মাশরুমের মতো ‘কাজি অফিস’ দেখা যায়, তারা সবাই কাজির সহকারী, যারা এলাকার ধনী-গরিব নির্বিশেষে যার কাছ থেকে যেভাবে পারে বিবাহ কার্য সম্পাদনের জন্য টাকা নিয়ে থাকে। এখানে সরকারি ধার্য ফিস সাধারণত ফলোআপ করা হয় না। কারণ বেশির ভাগ মানুষ জানে না বিয়ে নিবন্ধনের জন্য সরকারি ফি কত? সর্বসাধারণের সুবিধার্থে যা খুবই সামান্য।

এই চুক্তির ২ নং কলামটি পুরুষের জন্য বরাদ্দ। এখানে কেবল বর তার নিজ বাসভবনসহ বরের বাবার নাম লেখার সুযোগ আছে। উল্লেখ্য, মায়ের নাম লেখার কোনো সুযোগ নেই। যে মা এই বরটিকে জন্ম দিল এবং বিবাহ উপযুক্ত করে তুললেন তার কোনো অবস্থানই নেই। আর বর বা তার বাবার যে তথ্যগুলো দেওয়া হচ্ছে সেটি কতটুকু সঠিক সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল সৃষ্টি হয়েছে, সেটি সংযুক্ত হলে কি খুব ক্ষতি হতো? বা বরের কর্মপরিচয়টি থাকলে কোনো অসুবিধা হতো বলে মনে হয় না।

৩ নং কলামে বরের বয়স সম্পর্কে লিখতে হবে। বয়স কোনটি? জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী? জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী? নাকি স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী?

৪ নং কলামে আছে নিজ বাসস্থানসহ মেয়ে ও তার বাবার নাম এখানেও মা অবহেলিত অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলে মায়ের নামই আছে।

৫ নং কলামে কন্যা কুমারী, বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা কি না জানতে চেয়েছে। মেয়েটির বৈবাহিক অবস্থান জানতে চেয়েছে দলিল, কিন্তু ছেলেটির নয়। কেন? ছেলেটি কি কুমার বা বিপতœীক বা তালাকদাতা/প্রাপ্ত হতে পারে না?

৬ নং কলামে মেয়ের বয়স। এখানেও সেই ৩ নং কলামের কথাই প্রযোজ্য। কোনটিকে আসলে ধরা হবে বিবাহের ক্ষেত্রে? আজও আমাদের দেশ-গ্রামে ১২ বছরের পর পরই মেয়েকে আর্থসামাজিক কারণে বিবাহ উপযুক্তই মনে করা হয়। অথচ একটি মেয়ে বা ছেলে ভোট দিতে পারে ১৮ বছর হলে। তাই আজও এই দ্বন্দ্ব খোদ সরকারের মধ্যেই রয়েছে নাগরিকত্বের বয়স কত ধার্য হবে আর বিয়ের বয়স কত হবে? ১৬-১৮ নিয়ে এই যে দ্বন্দ্ব এটি দূর হবে কিভাবে?

৭ নং কলাম মেয়ের উকিল বাবার নাম-ঠিকানা লিখতে বলা হয়েছে। যদিও বিয়ে নিয়ে পরবর্তী সময়ে কোনো ঝামেলা হলে এই উকিল বাবাটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তার পরও একজন তৃতীয় পক্ষ অন্তত থাকল চুক্তির শুরুতেই।

৮ নং কলামে মেয়ের উকিল বাবা নিয়োগের ব্যাপারেও সাক্ষীদের নাম-ঠিকানাসহ মেয়ের সঙ্গে কী সম্পর্ক সেটি খুব পাকাপোক্তভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে, যা কাজি সাহেবরা নিজেরাই পূরণ করতে সিদ্ধহস্ত।

কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিবাহ চুক্তির ৯ নং কলাম ও ১০ নং কলাম ফাঁকা থাকে। ঘর দুটি পূরণ করা দরকার এ কথা কাজিরাও বলেন না, বরপক্ষও বলে না। আর কনেপক্ষের হাতে তো কিছুই নেই!

কী আছে তাহলে এই কলাম দুটিতে?

বিবাহ চুক্তির ৯ নং কলাম বর কর্তৃক উকিল নিযুক্ত হইলে উকিল এর নাম, বাবার নাম ও বাসস্থানের ঠিকানা লেখার কথা, যদিও এখানেও মা যথারীতি উপেক্ষিত অর্থাৎ এই ধরণীতে বিবাহের মতো একটি জীবনবন্ধন চুক্তিতে মায়ের কোনোই অবস্থান থাকার প্রয়োজন নেই। তবে যদি মেয়ের উকিল বাবার কথা লেখা অতীব আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে সেই ক্ষেত্রে বরের নয় কেন?

১০ নং কলাম বরের উকিল নিয়োগের ব্যপারে সাক্ষীদের নাম, বাবার নাম ও ঠিকানার ঘরটিও ফাঁকা থাকে ঠিক একই কারণে। অর্থাৎ ছেলে বা বরের কোনো চিহ্নই যেন এই চুক্তিতে না থাকে বা ভবিষ্যতের প্রয়োজনে তাদের ধারেকাছে না পাওয়া যায় তাই এই সুবন্দোবস্ত!

১১ নং কলামটি যেনতেনভাবে লেখা হয় ‘উপোরোক্ত সাক্ষীদ্বয়’ শব্দটি। এই উপরিউক্ত শব্দটি যে আসলে কী মানে বোঝাচ্ছে কে জানে। এখানে পরিষ্কার করে বলাই হয়নি বিয়ের কোন পক্ষের সাক্ষীদের নাম, বাবার নাম বা ঠিকানা?

১২ নং কলামে আছে, যে তারিখে বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করা হয়েছিল সেই তারিখ। অথচ যেদিন বিয়েটি তারা রেজিস্ট্রি করেছে সেই দিনেরই কথা উল্লেখ আছে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে, ছেলে-মেয়ে দুটি এখনই কাজির কাছে এলো আর সেই মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে হয়ে গেল! যদি সেটা পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও হয় তাহলেও কি এই একই কথা প্রযোজ্য? এত ফাঁকি কেন?

১৩ নং কলাম দেন মোহরানাসংক্রান্ত। দেনমোহর কত ধার্য হলো তা লেখা থাকে। মুসলিম শরিয়াহ আইন দেন মোহরানা বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছে, একটি মেয়ের দেনমোহরানা তার অধিকার। এটি একটি মেয়ের রাইটস, প্রিভিলেজ নয়। সেটি নির্ধারিত হবে মূলত মেয়েটির সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি মা-বোন-ফুপুদের দেনমোহরানার বিষয়টি মাথায় রেখে। পাশাপাশি মেয়েটির নিজস্ব কিছু যোগ্যতাও এখানে একটি বড় মাপকাঠি। কিন্তু আদৌ কোনো পক্ষ বিষয়টি মেনে বা ভেবে দেনমোহরানা নির্ধারণ করেন কি? দেনমোহর পরিশোধ করতেই হবে। এটি মাফ চাওয়ার বা মাফ করার সুযোগ নেই। স্বামী সেটি পরিশোধ করতে না পারলে বা মারা গেলে এই ঋণ পরিশোধের দায় ইসলাম স্বামীর বাবা থেকে স্বামীর ছেলের ওপর বর্তিয়েছে। সুতরাং এখানে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তাই বলে কি কোনো নারীই এই শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ে না?

১৬ নং কলামে বিশেষ বিবরণে জানতে চাওয়া হয়েছে, চুক্তির পক্ষদ্বয় এর মাঝে চুক্তিসূত্রে নির্ণীত মূল্যসহ কোনো সম্পত্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধ করা হয়েছে কি না? খুব আশ্চর্যজনকভাবে এই ঘরটিতে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়ে থাকে। কাজি সাহেবরা কি জানেন না সরকারি এই দলিলে কোনো ঘর ক্রস দেওয়ার কোনোই সুযোগ নেই? নাকি তারা যে এই অসমাপ্ত চুক্তিটি করে থাকেন একটি বিশেষ মুহূর্তে যেকোনো পক্ষ যেন অপব্যবহার করতে পারে?

১৮ নং কলামে লেখা, ‘স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন কিনা? করে থাকলে কি শর্তে?’ এটি একটি সিভিল কনট্রাক্ট। স্বামী বেচারার কী দায় পড়েছে যে তিনি স্বেচ্ছায় বিয়ের আসরেই এই ক্ষমতা তার স্ত্রীকে দেবেন? আর এই একই শর্ত কেন স্বামীর ক্ষেত্রেও দেওয়া হলো না? বৈষম্যমূলক এ চুক্তি কি আদৌ কোনো চুক্তি? স্বামী চাইলেই তালাক দেবেন আর স্ত্রী অবোধ, তাই তাকে হাজার পাহাড় ডিঙিয়ে তালাক চাইতে হবে স্বামীর কাছে? মূলত এ কলামটি পুরো চুক্তির মেরুদ- ভেঙে দিয়েছে। যদি এই শর্ত রাখতেই হয় তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই থাকবে, নইলে নয়। এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?

১৯ নং কলাম পুরুষতান্ত্রিক। স্বামীর তালাক প্রদানের অধিকার খর্ব করা হয়েছে কি না। চুক্তির কী নমুনা! সব কাবিনেই লেখা আছে, ‘না।’ অর্থাৎ স্বামী চাইলে যেকোনো মুহূর্তে স্ত্রীকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে পারেন। কিন্তু স্ত্রী নয়। কী বৈষম্য!

২০ নং কলামে এ বিবাহের সময় দেনমোহর, খোরপোষ বিষয়ে কোনো চুক্তি করা হয়েছিল কি না সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে। এটিই তো বিয়ের চুক্তি। এর আগে পরে তো আইনে কিছু না। তবে কেন মিছে এই লেখা? এই গুরুত্বপূর্ণ ঘরটিও ক্রস চিহ্ন দিয়ে খালি রাখা হয়েছে। তাহলে আর দরকার কী এসব ঘর রাখার?

২১ নং কলামে বরের কোনো বর্তমান স্ত্রী আছে কি না এবং থাকলে সালিসি পরিষদ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তার মানে বর্তমানে স্ত্রী থাকলেও তার কোনো মতামতের নাম বা দাম নেই। নারীকে পদে পদে অগ্নিপরীক্ষায় ফেলা হয়েছে যেখানে সেটি কিসের চুক্তি? মতামতের দাম আছে সালিসি পরিষদের। এই সালিসি পরিষদের কাজটা কি সেটিও আমরা সঠিকভাবে জানি না বা মানি না।

২২ নং কলাম জানতে চাইছে অন্য বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার জন্য সালিসি পরিষদের কাছ থেকে বরের অনুমতিপত্র নং...। কী ভয়ানক কথা! তার মানে একটি পুরুষকে যতভাবে সম্ভব একাধিক বিয়ে করানোর জন্য এই চুক্তি পক্ষান্তরে উৎসাহিত করছে। কারণ বাংলাদেশে এটি যে সহজলভ্য সেটি কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। চুক্তির-বিশ্বাসের-ভালোবাসার-আস্থার কোনো অবস্থান নেই?

২৩ নং কলাম যে ব্যক্তি দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়েছে তার নাম। মুসলিম বিয়েটা পড়ানো হয় মৌলভী সাহেবকে দিয়ে আর নিবন্ধন করা হয় কাজি দিয়ে। অথচ কোনো বিয়ের চুক্তিতেই দেখলাম না মৌলভী সাহেবের নাম। আসলে বিয়ের নিবন্ধনের নামে যে ফাঁকির খেলা চলছে সেটি দেখার আসলে কেউ নেই।

২৪ নং কলামে বিয়ে রেজিস্ট্রি করার তারিখ লিখতে হবে। আশ্চর্যজনকভাবে যে তারিখে বিয়ের কথা হয়েছে সেই তারিখেই রেজিস্ট্রি। এ মানে কী? এর মধ্যে আর কোনো কিছুই ঘটেনি?

২৫ নং অর্থাৎ সর্বশেষ কলামে রেজিস্ট্রি ফিস পরিশোধের বিষয়ে জানতে চেয়েছে এবং প্রতিটি কাবিন এই লেখা আছে ‘পরিশোধিত’। কে, কাকে, কত টাকা পরিশোধ করল কিছুই উল্লেখ নেই। এখানে সরকারকে চরম ফাঁকি দিয়ে কাজি সাহেবরা লাখ লাখ টাকা জনসাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর সাব-কাজি রেখে তাদের দিয়ে প্রথমে সাদা কাগজে বর ও কনের বিষয়ে সব কিছু লিখিয়ে নিয়ে তারপর একটি দিনক্ষণ দেখে নিয়ে তারা কাগজ সাপ্লাই দেন।

বিবাহ নিবন্ধন চুক্তির মূল্য, গুরুত্ব কী এতটাই হালকা? এতটাই সহজ? এ চুক্তির কোনো জায়গায় বর ও কনের বয়সের বিষয় বা সামাজিক বিষয় বা অর্থনৈতিক বিষয় অথবা শিক্ষাগত বিষয় প্রধান্য পায়নি। প্রাধান্য পেয়েছে শুধু কে কাকে কিভাবে কতটুকু ঠকাতে পারে। পুরো কাজটি করতে মেয়েপক্ষে ও ছেলেপক্ষের লাগে সাক্ষী। যদি কেউ নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করে সে ক্ষেত্রে সাক্ষীদের বিষয়ে কী করণীয়? কাজি সাহেবদের সোজা উত্তর, আমরাই নাম বসিয়ে দিই, কী আর করা?

এই যদি হয় জীবন-মরণের সঙ্গীর সঙ্গে চুক্তির নমুনা, তাহলে তো যেকোনো পক্ষ প্রতি পদেই হেস্তনেস্ত হবেই। এ আধুনিক যুগে বিবাহ নিবন্ধন চুক্তিটি সময়োযোগী করে তৈরি করতে হবে। সংশোধন করার সময় এসেছে। নইলে এত আয়োজন বৃথা।

- See more at: http://www.dhakatimes24.com/2015/05/11/65456/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE,-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A6%95-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF#sthash.ImukxwTt.dpuf

0 comments:

Post a Comment