Hot!

আইন না থাকায় সম্পত্তিপাচ্ছে না দত্তক শিশুরা

আইন না থাকায় সম্পত্তিপাচ্ছে না দত্তক শিশুরা
শামীমা মিতু এখন মা কথায় কথায় গায়ে হাত তোলেন, দাদিও বকাঝকা করেন। বাড়ির কেউ আমাকে দেখতে পারে না। সবাই বলে আমি নাকি এ বাড়ির কেউ না। আমাকে রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে। এভাবেই ১২ বছরের নাজলা (ছদ্ম নাম) পরিবারে তার অবহেলার কথা জানায়। নাজলা বলে, আগে আমি জানতামই না, এরা আমার আসল মা-বাবা নয়। এক বছর আগে আমার ছোট বোন জন্ম নেওয়ার পর থেকে তারা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। কথা হয় নাজলার বাবার সঙ্গে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, অনেক চেষ্টার পরও সন্তান নিতে পারছিলাম না। তখন একটি শিশুনিবাস থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে নাজলাকে পোষ্য নেই। নিজের মেয়ে হওয়ার পর বদলে গেছে আমার স্ত্রী। এখন আর নাজলাকে সহ্য করতে পারে না। নাজলাকে যেন কোনো সম্পত্তি না দেওয়ার পক্ষে সে।শুধু নাজলাই নয়, দেশে শিশু দত্তক আইন না থাকায় অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে এমন অনেক শিশু। সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। দত্তকের বিধান রয়েছে অভিভাবকত্ব আইনে। অভিভাবকত্ব আইনের মাধ্যমে দত্তক নিতে জটিলতার কারণে মানুষ উৎসাহিত হয় না। ফলে কোনো পরিবারের সানি্নধ্যে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বহু এতিম শিশুকে। আইন না থাকায় সন্তানহীন দম্পতিও আইনগতভাবে কোনো শিশুকে দত্তক নিতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আইনি প্রক্রিয়ার ঝামেলার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চুক্তির মাধ্যমে শিশু পোষ্য দেওয়া হয়। এটাকে শিশু কেনাবেচাও বলা হয়। টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান পোষ্য দেন বা বিক্রি করেন। যেখানে চুক্তিপত্রে সই করতে হয়, তারা আর কখনও ওই শিশুটির মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবেন না এবং অভিভাবক হিসেবে কোনো দাবি করতে পারবেন না।আবার অনেকে শিশু পোষ্য নিয়ে গৃহ শ্রমিক হিসেবে কাজ করান। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করেন। এমনি একজন শিশু ১১ বছরের হাসনা (ছদ্ম নাম)। ৪ বছর বয়সে একটি শিশুসদন থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিল একটি পরিবার। ছোট বোন জন্মের পর থেকে পরিবারের সবাই তার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। কয়েকমাস পরে তার ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে পালিয়ে শিশুসদনে ফেরত আসে হাসনা। শিশুনিবাসের পরিচালক বলেন, সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিও শিশু পোষ্য নিয়ে তাদের পারিবারিক পরিবেশ দেন না। এমনকি তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতনও করেন। এ কারণে এখন আর শিশুদের পোষ্য দেওয়া হয় না।চিলড্রেন রাইটস কনভেনশনের (সিআরসি) অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী, আন্তঃদেশীয় দত্তক স্বীকৃৃত। বাংলাদেশ এ বিধানটির ক্ষেত্রে সম্মতি স্থগিত রেখেছে (রিজার্ভ ক্লজ)। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বলা আছে, শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্র দত্তক পদ্ধতিকে স্বীকৃতি ও অনুমোদন দেবে। বাংলাদেশের আইনে দত্তক দেওয়া বা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। তবে গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট অনুসারে সন্তান পোষ্য নেওয়া যায়। এদিকে বাংলাদেশে হিন্দু আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান থাকলেও শুধু ছেলেশিশু দত্তক নেওয়া যাবে। হিন্দু পুরুষ বিবাহিত, অবিবাহিত বা বিপত্নীক যা-ই হোক না কেন, তার দত্তক নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার সীমিত। একজন অবিবাহিত নারী দত্তক নিতে পারেন না। বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি দরকার, এমনকি বিধবা হিন্দু নারী দত্তক গ্রহণ করতে চাইলে তাকে স্বামীর মৃত্যুর আগে দেওয়া অনুমতি দেখাতে হবে। আর মুসলিম আইনে দত্তক গ্রহণ স্বীকৃত নয়। খ্রিস্ট ধর্মেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দত্তক নেওয়ার বিধান নেই।এ প্রসঙ্গে মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সমকালকে বলেন, দত্তক আইন না থাকাতে সমস্যা হচ্ছে। এমন আইন করা উচিত, যাতে শিশুটি পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। দত্তক শিশুর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ দেশে আইনি প্রক্রিয়ায় নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে শিশুর আইনি অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা যায়। দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন ব্যক্তি কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব পেতে চাইলে তাকে পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র লাগবে। আইন কমিশন দত্তক আইন প্রণয়নের বিষয়ে সরকারকে তাগাদা দিয়ে আসছে। বছরের শুরুতে আইন কমিশন দত্তক আইন প্রণয়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি সুপারিশপত্র পাঠালেও এ ব্যাপারে এখনও কোনো আলোচনা শুরু হয়নি।

http://archive.samakal.net/print_edition/details.php?news=17&action=main&option=single&news_id=363457&pub_no=1507&view=archiev&y=2013&m=08&d=25

0 comments:

Post a Comment