Hot!

দেনমোহর : মুসলিম নারীর নিরঙ্কুশ অধিকার



মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর হলো বিয়ের অন্যতম শর্ত। এ শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিয়ের সময় কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পায় বা পাওয়ার অধিকার লাভ করে। দেনমোহর বিয়ের সময়ই ধার্য বা ঠিক করা হয়। এটা স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। আইনে যে কোনো অবস্থায়ই একজন স্বামী স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধে বাধ্য। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন গাজী আফসানা মাফ চাইলেই দেনমোহরের দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায় নাদেনমোহর সাধারণত দুই প্রকার_ তাৎক্ষণিক দেনমোহর ও বিলম্বিত দেনমোহর। স্ত্রী চাওয়ামাত্র তাৎক্ষণিক দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়। আর বিলম্বিত দেনমোহর বিয়ের পর যে কোনো সময়ে পরিশোধ করা যায়। তবে মৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদের পর দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধ করতে হয়। এ অবস্থায় দেনমোহরকে বিবেচনা করা হয় স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ হিসেবে।
দেনমোহর ধার্য করা ছাড়া কোনো বিয়ে কি শুদ্ধ হবে? মুসলিম আইন অনুসারে একটি বৈধ বা সহি বিয়ে হতে হলে পাঁচটি শর্ত পূরণ করতে হয়। দেনমোহর সেই পাঁচ শর্তের অন্যতম একটি। দেনমোহর ছাড়া বিয়ে বাতিল না হলেও এ ধরনের বিয়ে 'ফাসিদ' বা অনিয়মিত বা ত্রুটিযুক্ত বিয়ে। যে কোনো সময় দেনমোহর নির্ধারণ বা পরিশোধ করা হলে ফাসিদ বিয়েটি বৈধ বা সহি হয়ে যাবে। দেনমোহর বিয়ের আগে, বিয়ের সময় বা বিয়ের পর নির্ধারণ করা যায়। বিয়ের সময় যদি দেনমোহর নির্ধারিত না হয়ে থাকে, এমনকি স্ত্রী কোনো দেনমোহর দাবি করবে না শর্তে বিয়েটি যদি সম্পাদিতও হয়; তবুও স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বামী কোনো ধরনের শর্তকে অজুহাত হিসেবে প্রদর্শন করে স্ত্রীকে দেনমোহর দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবে না। অর্থাৎ দেনমোহর না দেয়ার চুক্তি করা হলে সেই চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং ন্যায্য হারে স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করতে হবে।



দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম আইনে বলা নেই। তবে স্ত্রীর পারিবারিক অবস্থান, পরিবারের অন্য নারী সদস্য যেমন ফুফু, বোন এবং অন্যদের দেনমোহর কত ধার্য হয়েছিল তার ওপর নির্ভর করে দেনমোহর ধার্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বামীর আর্থিক অবস্থাও বিবেচনায় রাখতে হবে। অনেক সময় স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করা ছাড়াই স্বামী তালাক দিয়ে দেন। এভাবে তালাক দেয়ার কোনো সুযোগ তাদের নেই। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর ঋণ পরিশোধ করা অবশ্যকর্তব্য। তবে মনে রাখতে হবে, স্ত্রী যে কোনো সময়ই স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর দাবি করতে পারেন। স্বামীর তালাক বা মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
দেনমোহর চাওয়ার পরও স্বামী যদি এই অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানান, সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর হাতে কিছু আইনি প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। তাৎক্ষণিক দেনমোহর চাওয়ার পর স্বামী দিতে অস্বীকার করলে তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে তা আদায়ের জন্য মামলা করতে হবে। বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু সময়সীমা বাঁধা নেই ফলে স্বামী বা স্ত্রী তালাক দিলে অথবা স্বামী মৃত্যুবরণ করলে পারিবারিক আদালতে তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। আর তালাক হয়ে গেলে স্ত্রীকে স্বামীর দেনমোহরের টাকা বা সম্পত্তি দিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, দেনমোহর ও ভরণপোষণ সম্পূর্ণ আলাদা। তালাক হয়ে যাওয়ার পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ প্রদানের বাইরেও স্ত্রী পৃথকভাবে দেনমোহরের দাবিদার।
ইদানীং গ্রামগঞ্জে দেনমোহর নিয়ে বরপক্ষ কিছু ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে থাকে। বিয়ে করতে আসার সময় বরপক্ষ যেসব উপহারসামগ্রী নিয়ে আসে, সেগুলোকে দেনমোহর হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় কনেকে উপহার হিসেবে যে শাড়ি, গয়না, কসমেটিকস্ দেয়া হয়, তা কোনোক্রমেই দেনমোহরের অংশ হবে না। মনে রাখতে হবে, উপহার উপহারই, দেনমোহর নয়। দেনমোহর স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দেয়া কিছু অর্থ বা মূল্যবান সম্পদকে বোঝাবে, অন্য কিছু নয়। যদি কাবিননামায় দেনমোহর হিসেবে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দেয়ার কথা উল্লেখ না থাকে তবে স্ত্রীকে উপহার হিসেবে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দিলে তা দেনমোহর হিসেবে পরিশোধ হবে না।
স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী কীভাবে অপরিশোধিত দেনমোহর দাবি করবেন? মূলত স্বামীর মৃত্যুর পর দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ হিসেবে ধরা হবে। স্বামীর মৃত্যুর পর দাফন, কাফন ও অন্যান্য অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর স্বামীর অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করার সময় স্ত্রী দেনমোহর দাবি করতে পারেন। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। যদি স্বামীর উত্তরাধিকারীরা স্বামীর সম্পত্তি থেকে দেনমোহর দিতে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন। উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ওই দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী এবং এ জন্যে তারা আদালতে মামলা করতে পারবেন।
স্বামী দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নিজ দখলে রাখতে পারেন। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় কোনো স্ত্রী কোনো সম্পত্তি দখলে রাখলে এবং স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ওই সম্পত্তির দখল ভোগ করতে থাকলে তার দখলটি বৈধ ও আইনসম্মত হবে। স্ত্রী দখলকৃত সম্পত্তির খাজনা, লাভ বা আয় থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে পারবেন। এ সময়ে কেউ তাকে দখল থেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে তিনি সে দখল উদ্ধারের মামলা করতে পারবে। দেনমোহর-সংক্রান্ত মামলা স্থানীয় সহকারী জজ আদালতে দায়ের করতে হবে।
অনেকেই মনে করেন, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়া হলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। দেনমোহর হলো বিয়ের শর্ত, যার সঙ্গে তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং, যে কোনো অবস্থায় স্বামীকে দেনমোহরের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আবার অনেকেই মনে করেন, শুধু তালাক দিলেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়। এটিও একটি ভুল ধারণা। মূলত বিয়ের সময় অথবা বিয়ের পর যে কোনো সময় দেনমোহর পরিশোধযোগ্য।
স্ত্রীর কাছ থেকে মাফ নিয়ে অনেক পুরুষ দেনমোহরের দায় থেকে মুক্তি পেতে চান। স্ত্রী অবশ্য ইচ্ছে করলে দেনমোহর মাফ করে দিতে পারেন। তবে আবেগতাড়িত করে কিংবা প্রভাব খাটিয়ে মাফ আদায় করা হলে সেটি আইনের চোখে টিকবে না।
দেনমোহরের পরিমাণ কতটা হওয়া উচিত, তা নিয়েও অনেকের জিজ্ঞাসা থাকে। দেনমোহর হলো স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য। দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে স্ত্রীর পারিবারিক অবস্থান ও স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করা প্রয়োজন। দেনমোহর এত বেশি হওয়া উচিত নয়, যা স্বামীর পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়; আবার এত কম হওয়া উচিত নয় যা স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে না।- See more at: http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=31-03-2013&feature=yes&type=single&pub_no=434&cat_id=3&menu_id=76&news_type_id=1&index=0#sthash.6zk4nyg9.dpuf

0 comments:

Post a Comment