Hot!

ভারতবর্ষের খোরপোষ বা ভরণপোষণের ব্যবস্থা


খোরপোষ বা ভরণপোষণ
খোরপোষ বা ভরণপোষণের ব্যবস্থা ভারতবর্ষের বিভিন্ন আইনে আছে - যেমন, ভারতীয় ফৌজদারী পদ্ধতি, ১৯৭৩ (Code of Criminal Procedure, 1973)-এর ১২৫ ধারায় এবং হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ ও হিন্দু দত্তক এবং ভরণপোষণ আইন, ১৯৫৬-তে।
ভারতীয় ফৌজদারী পদ্ধতি, ১৯৭৩ (Code of Criminal Procedure, 1973)-এর ১২৫ ধারা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির স্ত্রী, বৈধ কিংবা অবৈধ নাবালক সন্তান (তারা বিবাহিত হোক বা না হোক), শারীরিক বা মানসিক দিক থেকে প্রতিবন্ধী সাবালক সন্তান, পিতা বা মাতা যদি নিঃসম্বল হন এবং নিজেদের খরচপত্র চালাতে অসমর্থ হন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে তাঁদের খোরপোষ দিতে হবে। সাবালক কন্যা যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তার খোরপোষ দাবী করার অধিকার নেই।
প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট যদি প্রমাণপত্র দেখে নিশ্চিত হন যে, ব্যক্তিটি তাঁর উপর নির্ভরশীল উপরে উল্লেখিত পরিজনদের উপেক্ষা করছেন এবং ভরণপোষণে অস্বীকৃত হচ্ছেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ঐ ব্যক্তিকে তাঁদের নিয়মিত মাসোহারা বা খোরপোষ দেবার হুকুম জারি করতে পারেন। সেই খোরপোষের পরিমান ম্যাজিস্ট্রেট নির্দিষ্ট করবেন এবং সময়ে সময়ে সেটা তাঁর নির্দেশে পরিবর্তীত হতে পারে। বিবাহিত নাবালিকা কন্যার ক্ষেত্রে যতদিন না সে নিজের খরচপত্র চালাতে সমর্থ হয়, ততদিন সে খোরপোষ পাবে।
এই ব্যবস্থায় স্ত্রী বলতে শুধু বৈধ স্ত্রী বোঝাচ্ছে না, যে নারীর সঙ্গে আইনগত ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে তাঁকেও বোঝাবে - যদি না তিনি আবার বিয়ে করে থাকেন। নাবালক বলতে বোঝাবে ভারতীয় সাবালকত্ব আইন, ১৯৭৫-এ যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে ১৮ বছরের অনুর্ধরা নাবালক।
এই ব্যবস্থা অনুযায়ী স্ত্রী হিসেবে কোনও নারী খোরপোষ দাবী করতে পারবেন না, যদি তিনি অন্য কারোর সঙ্গে ব্যাভিচারে লিপ্ত থাকেন অথবা কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে অস্বীকৃত হন, অথবা যেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে আলাদাভাবে বসবাস করছেন।
খোরপোষ বা ভরণপোষণের ব্যবস্থা হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ এবং হিন্দু দত্তক এবং ভরণপোষণ আইন, ১৯৫৬-তেও রয়েছে। ভরণপোষণ আইন, ১৯৫৬-তে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর ভরণপোষণ পাবার অধিকারের কথা বলা আছে। বিবাহিতার স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে স্বামী বাধ্য। একসঙ্গে বসবাস না করলেও স্ত্রী ভরণপোষণ দাবী করতে পারেন, যদি -
  • স্বামী স্ত্রীর অনুমতি বা সম্মতি ছাড়াই তাঁকে ফেলে রেখে চলে যান, ইচ্ছেকরে স্ত্রীকে অবহেলা করেন বা যুক্তিসঙ্গতঃ কারণ ছাড়াই তাঁকে পরিত্যাগ করেন;
  • স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক ভাবে এমন নির্যাতন করেন যে স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করা ভয়বশতঃ সম্ভব হয় না;
  • স্বামী কোনও ভয়াবহ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন;
  • যদি সেই স্বামীর অন্য কোনও বিবাহিত স্ত্রী থাকেন;
  • যদি স্বামী তাঁর রক্ষিতাকে বাড়িতে এনে সহবাস করেন;
  • হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন,
  • কিংবা অন্য কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণে।
প্রসঙ্গতঃ হিন্দু দত্তক ও ভরণপোষণ আইনে সহায়-সম্বলহীন পুত্রবধূও শ্বশুরের কাছ থেকে খোরপোষ পেতে পারেন। সহায়-সম্বলহীন বলতে বোঝাচ্ছে যে, সেই নারী যদি নিজের খরচা চালাতে অসমর্থ হন, যদি তাঁর নিজের বা নিজের অধিকারে কোনও সম্পত্তি না থাকে এবং তাঁর স্বামীর জমি, বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি থেকে বা তাঁর পিতা বা মাতার জমি, বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি থেকে খরচ মেটাতে না পারেন।
হিন্দু বিবাহ আইনে রয়েছে যদি কোনও হিন্দু পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত থাকেন কিংবা নিজের হিন্দু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন কিংবা স্ত্রীর কোনও খোঁজ খবর না রাখেন, অকারণে সহবাস থেকে নিরত থাকেন; উপরন্তু তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা আনেন কিংবা আইন সম্মত ভাবে আলাদা থাকার দাবী করেন কিংবা সহবাসের অধিকার পুনঃস্থাপনের জন্য দাবী জানান, সেক্ষেত্রে সেই হিন্দু স্ত্রী আদালতের কাছে রিলিফ বা আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা দাবী করতে পারেন। অর্থাত্, বৈধ স্বামীর কাছ থেকে খোরপোষের দাবী করে দরখাস্ত করতে পারেন এবং মামলা চালানোর খরচাও দাবী করতে পারেন।

http://www.abasar.net/UNIlaw_Mainetenance.htm

0 comments:

Post a Comment