Hot!

ভারতের হিন্দু দত্তক আইন (১৯৫৬) সম্পর্কিত কিছু তথ্য


হিন্দু দত্তক আইন (১৯৫৬) সম্পর্কিত কিছু তথ্য
১৯৫৬ সালের ২১ শে ডিসেম্বরে হিন্দু দত্তক আইনটি বলবত্ হয়। এই আইনের আগে শুধু ছেলেদেরই দত্তক নেওয়া যেত, মেয়েদের নয়। এই আইনের বলে এখন মেয়েদেরও দত্তক নেওয়া সম্ভব। হিন্দু দত্তক আইন জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া ভারতবর্ষের অন্য সব প্রদেশেই প্রযোজ্য। হিন্দু , জৈন , বৌদ্ধ ও শিখ - সব ধর্মাবলম্বীরাই এই আইনের আওতায় পড়ে। কিন্তু মুসলিম, কৃশ্চান, পার্সী ও ইহুদীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
দত্তক গ্রহণ বৈধ বলে বিবেচিত হবে নিচের সব শর্তাবলীগুলি মানা হলে:
যে দত্তক নেবে, তার দত্তক নেবার আইনত ক্ষমতা বা যোগ্যতা আছে।
যে দত্তক দেবে, তার সেরকম যোগ্যতা আছে।
যাকে দত্তক নেওয়া হবে, তারও সেরকম যোগ্যতা আছে।
দত্তক নেওয়া হচ্ছে আইনসঙ্গত ভাবে।
দত্তক গ্রহণ করার যোগ্যতা:
হিন্দু পুরুষের ক্ষেত্রে: যে কোনও সুস্থমস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ স্ত্রীর সন্মতি নিয়ে শিশুপুত্র বা শিশুকন্যাকে দত্তক নিতে পারে। স্ত্রীর সন্মতির প্রয়োজন হয় না, যদি তাঁর স্ত্রী কোর্টের বিচারে সুস্থমনা না হয় অথবা সংসার পরিত্যাগ করে থাকে কিংবা হিন্দুত্ব বর্জন করে থাকে।
হিন্দু নারীর ক্ষেত্রে: একজন সুস্থমনা প্রাপ্তবয়স্কা হিন্দু নারী শিশুপুত্র বা শিশুকন্যাকে দত্তক নিতে পারে, যদি সে অবিবাহিতা হয় বা বিবাহ-বিচ্ছিন্না হয় অথবা বিধবা হয়। স্বামীর বর্তমানেও হিন্দু নারীর পক্ষে দত্তক নেওয়া সম্ভব, যদি তার স্বামী সংসার পরিত্যাগ করে থাকে, অথবা হিন্দুত্ব বর্জন করে থাকে, কিংবা কোর্টের চোখে অসুস্থমস্তিষ্ক বলে পরিগণিত হয়। যদি হিন্দুনারী বিবাহিতা হয়, তাহলে তাকে স্বামীর সন্মতি নিয়ে দত্তক নিতে হবে।

দত্তক দেবার অধিকার:
সন্তানকে দত্তক হিসেবে দেবার অধিকার শুধু পিতা বা মাতা বা অভিভাবকের আছে। পিতা সন্তানকে দত্তক হিসেবে দান করতে পারে মাতার সন্মতি নিয়ে। মাতা যদি সংসার ত্যাগ করে থাকে, অথবা হিন্দুত্ব বর্জন করে থাকে, কিংবা কোর্টের বিচারে অসুস্থমস্তিষ্ক বলে পরিগণিত হয়, তাহলে তার সন্মতির কোনও প্রয়োজন নেই। বিধবা নারী তার সন্তানকে দত্তক দিতে পারে। বিবাহিত নারীও তা পারে, যদি তার স্বামী সংসার ত্যাগ করে থাকে, অথবা হিন্দুত্ব বর্জন করে থাকে, কিংবা কোর্টের বিচারে অসুস্থমস্তিষ্ক বলে পরিগণিত হয়।
১৯৬২ সালের শিশু আইন (children act, 1962) অনুসারে, যদি শিশুর মাতা ও পিতা দুজনের কেউই বেঁচে না থাকে বা সংসার ত্যাগ করে থাকে বা শিশুকে পরিত্যাগ করে থাকে, অথবা কোর্টের বিচারে মানসিকভাবে অসুস্থ পরিগণিত হয়, বা শিশুর সঠিক পিতা মাতার পরিচয় অজ্ঞাত থাকে, তাহলে সেই শিশুর অভিভাবক সেই শিশুকে দত্তক হিসেবে দান করতে পারে - কোর্টের অনুমতি নিয়ে। কোর্ট এই অনুমতি দেবে শিশুর বয়স ও বিচারবুদ্ধি অনুয়ায়ী তার ইচ্ছার কথা বিবেচনা করে এবং তার মঙ্গলের কথা চিন্তা করে। এই অনুমতি পেতে হলে কোর্টকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে, দত্তক-সংক্রান্ত ব্যাপারে বে-আইনী ভাবে পয়সার কোনও লেনদেন হচ্ছে না।

দত্তক হিসেবে কাউকে নেওয়া যাবে না-
যদি সে হিন্দু না হয়।
যদি সে ইতিপূর্বেই আর করোর দত্তক হয়।
যদি সে বিবাহিত হয় (ব্যতিক্রম: যদি এ ব্যাপারে অন্য কোনও সামাজিক নিয়ম না থাকে)।
যদি তার বয়স পনেরোর কম না হয় (ব্যতিক্রম: যদি এ ব্যাপারে অন্য কোনও সামাজিক নিয়ম না থাকে)
দত্তক সম্পর্কিত অন্যান্য আইন:
শিশুপুত্রকে দত্তক নেবার ক্ষেত্রে যে পিতা বা মাতা দত্তক নিচ্ছে, তাদের কোনও হিন্দু পুত্র, পৌত্র, বা প্রপৌত্র জীবিত থাকলে দত্তক গ্রহণ বৈধ হবে না।
শিশুকন্যাকে দত্তক নেবার ক্ষেত্রে যে পিতা বা মাতা দত্তক নিচ্ছে, তাদের কোনও হিন্দু কন্যা (পুত্রী), পৌত্রী, বা প্রপৌত্রী জীবিত থাকলে দত্তক গ্রহণ বৈধ হবে না।
যে পুরুষ (বা নারী) শিশু-পুত্রকে দত্তক নিচ্ছে, তার বয়স দত্তকের থেকে অন্তত ২১ বছরের বেশি হতে হবে।
একই শিশুকে একাধিক দম্পতী দত্তক নিতে পারবে না।
দত্তক দেওয়া বা নেওয়ার উদ্দেশ্য হতে হবে জন্ম-পিতামাতার কাছ থেকে নিয়ে শিশুকে সরিয়ে নেওয়া।
(ভারতবর্ষে মুসলিম, কৃশ্চান, পার্সী ও ইহুদীদের জন্য দত্তক নেবার কোনও আলাদা আইন নেই। এরা অনাথ-আশ্রম থেকে দত্তক নিতে পারে Guardians and Wards Act অনুসারে কোর্টের অনুমতি নিয়ে।)


সূত্র: http://www.abasar.net/UNIlaw_Hinduadoption.htm

0 comments:

Post a Comment