Hot!

অভিভাবকহীন শিশুদের জন্য দরকার অভিন্ন দত্তক আইন

অভিভাবকহীন শিশুদের জন্য দরকার অভিন্ন দত্তক আইন


আমাদের সময়.কম
10.10.2015

Children-400x225তামান্না খান : দেশে যথাযথ কোন দত্তক আইন না থাকায় ছবির হাতাবিহীন টি-শার্ট পরা ছোট্ট এই শিশুটির মতো আরও অনেক শিশুই বেড়ে উঠছে সরকারি শিশু কেন্দ্রগুলোতে।
গত মাসে দেড় বছরের শিশু রাকিবুল ইসলামের এই ছবিটি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার পর তা ব্যাপকভাবে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেকে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য প্রতিবেদকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে।
তবে নানা আইনি জটিলতা আর যথার্থ দত্তক আইনের অভাবে এমন অনেক শিশুকেই থাকতে হচ্ছে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। গত বছরের নভেম্বরে শিশু রাকিবুলকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর আজিমপুরের ছোট্টমনি নিবাস নামক সরকারি এই শিশুকেন্দ্রে।
তাসলিমা নামক এক মহিলার কাছ থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিল এক হিন্দু দম্পতি। তবে এক মুসলিম দম্পতি নিজেদেরকে শিশুটির মাতা পিতা দাবি করে শাহ আলি থানায় মামলা করলে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে ছোট্টমনি নিবাসের ডেপুটি সুপার সেলিনা আখতার বলেন, মুসলিম দম্পতির সাথে রাকিবুলের ডিএনএ না মেলায় কোন পরিবারের কাছেই রাকিবুলকে হস্তান্তর করা হয়নি। তাসলিমাকে এবং কিভাবে শিশুটি হিন্দু দম্পতির ঘরে লালিত পালিত হলো এ বিষয়টি এখনও রহস্যময়।
তাই শেষ পর্যন্ত শিশুটির ভাগ্য তাকে এই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে এই আশ্রয়কেন্দ্রটিতে ৭ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের ২৪টি শিশু রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা এবং বরিশালে আরও ৫টি ছোট্টমনি নিবাস রয়েছে। এগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
সেলিনা আরও বলেন, ‘যদি তাদের সত্যিকারের মাতাপিতা অথবা আইনগত অভিভাবকরা যথাযথ কাগজপত্র ও প্রমাণ নিয়ে আসে তাহলে আমরা আদালতের মাধ্যমে শিশুদেরকে তাদের কাছে হস্তান্তর করি।’
অন্যথায় ৭ বছর বয়স হলে তাদেরকে দেশের সরকারি ১৩টি এতিমখানার কোনও একটিতে পাঠানো হয়। শিশু পরিবার নামক এসব এতিমখানায় তারা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অবস্থান করে।
২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত গত প্রায় ৫০ বছরে ২১৯ শিশুকে তাদের সত্যিকারের মাতাপিতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৯১৫ শিশুকে পাঠানো হয়েছে এতিমখানায় এবং ১৮ শিশুকে আদালতের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা জানান, বাংলাদেশে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়েই আইনগত দত্তকের বিষয়টি প্রযোজ্য। হিন্দু পারিবারিক আইনানুসারে শুধু হিন্দু পুরুষরাই ছেলে শিশুকে দত্তক নিতে পারে। দত্তক নেওয়া শিশুরা পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুদের মতোই সব অধিকার ভোগ করতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই সে (দত্তক নেওয়া শিশু) সম্পদের অধিকার ভোগ করতে পারে বলেও জানান তিনি।
মুসলিম আইনানুসারে দত্তক নেওয়ার বিষয়টি স্বীকৃত না হওয়ায় কোনও মুসলিম দম্পতি শিশু দত্তক নিতে পারে না। পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তারা অভিভাবকত্ব প্রয়োগ করতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এসব শিশুদের দায়িত্ব সরকারের। তারা সরকারি তত্ত্বাবধায়নে থাকাই ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে অভিভাবকত্বের বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে অনেকে আদালতের মাধ্যমে অভিভাবকত্ব নেয় কিন্তু পরবর্তীতে তাদের যথাযথ যতœ নেয় না। অনেকেই তাদের অপব্যবহার করে, ঘরের কাজের লোক হিসেবে ব্যবহার করে।
বিদেশে শিশু দত্তক নেওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক শাহনাজ বলেন, ‘তারা (সরকার) শুধু দত্তক নেওয়া শিশুটির বিষয় তত্ত্বাবধায়নই করে না, বরং পালক মাতাপিতাকে শিশুকে বড় করে তোলার পূর্ণ খরচও দেয়।’
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ শিশুটি তার আইনগত অভিভাবকের কাছে নিরাপদ কিনা তা কে দেখবে?’
ঢাকার গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের শিশু উন্নয়ন ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আফরোজা খানম বলেন, পরিবারের মধ্যে কিছু শিখতে শুরু করার মতো শিশুর উপর প্রভাব বিস্তারকারী আর কিছু অধিকতর ভালো হতে পারে না।
এতিমখানার পরিবেশ সুন্দর না হলে শিশুদের মধ্যে এর একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থাকে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব শিশু এতিমখানায় বড় হয় তারা পরিবারের এসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। তারা অন্যান্য শিশুদের সাথে নিজেদের মধ্যে মারামারির মধ্য দিয়ে বড় হয়।’
রাকিবুলের মতো শিশুদের ভাগ্য পরিবর্তনে যথার্থ মনিটরিং ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি অভিন্ন দত্তক আইন দরকার বলে মনে করেন তিনি।
অনুবাদ : রাশেদ শাওন, দ্য ডেইলি স্টার থেকে।
http://amadershomoys.com/unicode/2015/10/10/19877.htm#.VjrhqpP0o4k

0 comments:

Post a Comment